রবিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই চ্যালেঞ্জ ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর

আকতারুজ্জামান

দেশের প্রায় ১৪ লাখ এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ভালো ফল পেয়েও এবার মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারার শঙ্কা রয়েছে এই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। কারণ এ বছর পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি উভয় ক্ষেত্রেই রেকর্ডের সৃষ্টি হয়েছে।

করোনা মহামারীর কারণে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন তাদের সবাইকেই উত্তীর্ণ করানো হয়েছে এবার। এইচএসসিতে এবার ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। এসব শিক্ষার্থীর প্রধান আকর্ষণ থাকবে সরকারি মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিতে। এর পাশাপাশি হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে ৪ হাজার ৮৮২টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে সারা দেশের ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে স্নাতক পাস/স্নাতক সম্মান ও সমমান পর্যায়ে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে মোট মাত্র ৪৭ হাজার ১৭১টি। সে হিসাবে শুধু জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও এসব মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। এইচএসসিতে ভালো ফল পাওয়া শিক্ষার্থীরা তাই এখন মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া শামসুন্নাহার কলি জানান, পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়ন করে ফল দেওয়ায় গত বছরের চেয়ে তিনগুণের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার ভালো বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে গেল। কারণ এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয়। এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় আবেদনের সুযোগ থাকে শিক্ষার্থীদের। অন্তত ৫০ হাজার শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দ্বিতীয় দফায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। এইচএসসি উত্তীর্ণ প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভর্তিচ্ছুর তালিকায় যুক্ত হবে আগের বছরের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও। সে হিসাবে বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে ভর্তি হতে হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ (২০১৯) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে স্নাতক পাস/স্নাতক সম্মান ও সমমান পর্যায়ে ভর্তিযোগ্য মোট আসন রয়েছে মাত্র ৪৭ হাজার ১৭১টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫টি। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৬ হাজার ৭৫টি। সব মিলিয়ে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মাত্র ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬১টি। এ ছাড়া ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পাস/ স্নাতক সম্মান ও সমমান পর্যায়ে ভর্তিযোগ্য মোট আসন রয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৭টি। সব মিলিয়ে সারা দেশে ১১ লাখ ১১ হাজার ২১৮ জন শিক্ষার্থীর ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে গতকাল ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গত বছর যে সুযোগ ছিল, এবার স্বাভাবিকভাবে একটু বেড়েছে। সবাইকেই এ পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, বিভিন্নভাবে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নিজেদের মেধার পরিচয় দিয়েই ভর্তির সুযোগ পাবে তারা। মন্ত্রী বলেন, পাস করা সব শিক্ষার্থী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেলেও ভর্তির সুযোগ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি কলেজে পর্যাপ্ত আসন রয়েছে ভর্তির জন্য। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের স্থান তৈরি করতে হবে তাদের। এবার ভর্তি পরীক্ষায় হয়রানি কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর