সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ফলাফলে ভিন্ন যত চিত্র

চট্টগ্রাম সিটিতে সর্বনিম্ন ভোট ১.৩৬, সর্বোচ্চ ৯৩.৮২ শতাংশ, বিএনপি শূন্য থেকে ১০ পেয়েছে ১৭০ কেন্দ্রে, শূন্য থেকে ১ ভোট ২৬ কেন্দ্রে

গোলাম রাব্বানী

ফলাফলে ভিন্ন যত চিত্র

এবারের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ১.৩৬ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৯৩.৮২ শতাংশ। মেয়র পদে ভোট কাস্ট হয়েছে ২২.৪৯ শতাংশ। এছাড়া মোট ৭৩৩ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে শূন্য থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৬৩ ভোট কেন্দ্রে। এরমধ্যে ১৭০ ভোট কেন্দ্রে বিএনপি ভোট পেয়েছে শূন্য থেকে ১০টি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭৩৩ ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র মিলেছে। তবে নির্বাচনের এই ফলাফলের চিত্রকে অস্বাভাবিক বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এ সিটি ফলাফল নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেক প্রার্থী বলছেন, ফলাফল পাল্টিয়ে দেওয়ার কথাও।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৮৪.৫৮ ভাগ এবং বিএনপি পেয়েছে ১২.০২ ভাগ ভোট। এছাড়া ৩.৪ ভাগ ভোট পেয়েছেন অন্য মেয়রপ্রার্থীরা। নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়রপ্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে শূন্য ভোটও পেয়েছেন। বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকে শূন্য থেকে ১০ পেয়েছে ১৭০ ভোট কেন্দ্রে। এরমধ্যে ধানের শীষ প্রার্থীকে শূন্য থেকে ১ ভোট পড়েছে ২৬ কেন্দ্রে। ২ ভোট পড়েছে ৩৬ কেন্দ্রে। ৩ ভোট পড়েছে ২৮ কেন্দ্রে। ৪ ভোট পড়েছে ১৩ কেন্দ্রে। ৫ ভোট পড়েছে            ১২ কেন্দ্রে। ৬ ভোট পড়েছে ১১ কেন্দ্রে। ৭ ভোট পড়েছে ১৫ কেন্দ্রে। ৮ ভোট পড়েছে ১০ কেন্দ্রে। ৯ ভোট পড়েছে ৭ কেন্দ্রে এবং ১০ ভোট পড়েছে ১২ ভোট কেন্দ্রে। দেখা গেছে, এ সিটির ৫৯টি ভোট কেন্দ্রে ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এছাড়া ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে ৯৯ কেন্দ্রে। আর ১০ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০৫ কেন্দ্রে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন কম ভোট ১.৩৬ শতাংশ পড়েছে হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে (৬৩৮ নম্বর)। এখানে নৌকা পেয়েছে ৩৭ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে ৩ ভোট। ১.৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে একই বিদ্যালয়ের ৬৩৯ নম্বর কেন্দ্রে। আর এই বিদ্যালয়ের ৬৩৭ নম্বর কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১.৮৫ শতাংশ। আল জামেয়া আল আরাবিয়া মোজাহেরুল উলুম মাদরাসা (নারী কেন্দ্র) কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১.৭৮ শতাংশ। এরমধ্যে নৌকা পেয়েছে ৫০ ভোট, ধানের শীষ পেয়েছে ৫ ভোট। এছাড়া সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে এহয়াউল উলুম আরাবিয়া মাদরাসার ৬৯৮ নম্বর কেন্দ্রে। এখানে ভোট পড়েছে ৯৩.৮২ শতাংশ। এখানে নৌকায় ভোট পড়েছে ২ হাজার ৭৮৭টি এবং ধানের শীষে ভোট পড়েছে ৮৬টি। মোট ১১টি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে। 

এদিকে এ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন বিএনপিসহ বাকি ৬ মেয়রপ্রার্থী। এ সিটিতে মেয়র পদে মোট ভোট কাস্ট হয়েছে ২২.৪৯ ভাগ। মোট ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০ জন ভোট দিয়েছেন। এরমধ্যে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী  পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। এ সিটি ভোট জামানত রক্ষা করতে বিএনপির ভোটের প্রয়োজন ছিল ৫৪ হাজার ৫৬৭টি। কিন্তু বিএনপি ভোট পেয়েছে ৫২ হাজার ৪৮৯টি। অন্যদিকে বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার। এবার তা কমে হয়েছে ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। ছয় বছরের ব্যবধানে এ সিটিতে বিএনপি ভোট হারিয়েছে প্রায় তিন লাখ।

ফলাফল শিটে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম সিটির নজিরিয়া নঈমিয়া মাহমুদিয়া ফাজিল মাদরাসার (কেন্দ্র-২) ধানের শীষ প্রতীকে শূন্য ভোট পড়েছে। অন্যদিকে একই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ২৮২ ভোট। তবে চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে বিএনপি। ওই কেন্দ্রের নাম উত্তর হালিশহর প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে ৫৬৮ ভোট পড়েছে ধানের শীষে। এই কেন্দ্রে নৌকায় ভোট পড়েছে ৪৫৮টি। গত ২৭ জানুয়ারি বুধবার ভোট হয় চট্টগ্রাম সিটিতে। নির্বাচন চলাকালে দফায় দফায় সংঘর্ষ-সহিংসতা, গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, প্রাণহানিও ঘটেছে। পাঁচটি ইভিএম ও পুলিশ-নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তিনটি মিনিবাস ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অস্বাভাবিক ভোট প্রদানের চিত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামে ধানের শীষ প্রতীকে কোনো ভোট না পড়া তথা শূন্য ভোট অস্বাভাবিক নিঃসন্দেহে। এটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের প্রতিফলন। আমরা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন দেখেছি খুলনা-গাজীপুরে। এসব নির্বাচন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা বড় সংকটের মধ্যে আছি।

চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টির ফল  ঘোষণা হয়। দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন হলেও ভোট দিয়েছেন মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯। ভোটের হার ২২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ৫৪৯টি ভোট বাতিল হয়েছে। অন্য মেয়রপ্রার্থীদের মধ্যে এনপিপির আবুল মনজুর ৪ হাজার ৬৫৩ ভোট, ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন ২ হাজার ১২৬, স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী ৮৮৫ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ১ হাজার ১০৯ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৮০ ভোট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর