সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশে দেশে টিকা নিচ্ছেন প্রবাসীরা

জুলকার নাইন

মোবাইল ফোনে একটি অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য একে একে ডাক পাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বৈধভাবে সৌদি আরবে বসবাস করা কয়েকশ বাংলাদেশি ইতিমধ্যেই টিকা নিয়েছেন। অনেকেই অপেক্ষায় আছেন টিকা নেওয়ার জন্য ডাক পাওয়ার। ফাইজারের তৈরি টিকা দেওয়া হচ্ছে সৌদি আরবে। সৌদি নাগরিক ও প্রবাসী শ্রমিক সবার জন্যই বিনামূল্যে সেখানে দেওয়া হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকা।

করোনার টিকা নেওয়া রিয়াদের রেস্টুরেন্ট কর্মী আযম ইকবাল জানান, যে স্থানে টিকা নিয়েছিলাম সেখানে খানিকক্ষণের জন্য ব্যথা ছিল। এর বাইরে টিকা নেওয়ার পর আমার কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। অপর কর্মী রিয়াজউদ্দিন বলেন, টিকা নেওয়ার স্থানটিতে কিছুটা ব্যথার পাশাপাশি ১২-১৪ ঘণ্টা পর রাতে আমার জ্বর আসে। কিছুক্ষণ পর সেই জ্বর ভালো হয়ে যায়। আযম ইববাল ও রিয়াজউদ্দিন ১৯ দিন পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন। দ্বিতীয় ডোজের পরও এই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তাদের দুজনের। আযমের খানিকটা ব্যথা ছাড়া কিছুই ছিল না। তবে রিয়াজউদ্দিনের জ্বর এবার খানিকটা দীর্ঘ স্থায়ী হয়। সৌদি আরবের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন করোনার টিকা।

ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের নাগরিকদের পাশাপাশি ফাইজারের করোনার প্রতিষেধক টিকা নিচ্ছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরাও। কোপেনহেগেনের বাসিন্দা ডেনমার্ক প্রবাসী পাবনার খাদিজা খাতুন ইতিমধ্যেই টিকা নিয়েছেন। তিনি ডেনমার্কের একটি হাসপাতালে সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। খাদিজা জানান, আমি ৬ জানুয়ারি প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছি। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছি ২৭ জানুয়ারি। করোনার প্রতিষেধক টিকা নিলে আক্রান্ত ও মৃতের শঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে। জার্মানির বন শহরের বাসিন্দা বন্যা ফেরদৌস সেখানকার একটি নার্সিং হোমে কাজ করেন। এর সুবাদে তিনি ইতিমধ্যেই পেয়েছেন করোনার টিকা। টিকা নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত বন্যা ফেরদৌস ইতিমধ্যেই তার টিকা দেওয়ার ছবি শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য জার্মানিতে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া ৮০ এর কম বয়সীদের এখনো টিকা দেওয়া শুরু হয়নি।

করোনার আঘাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ ডিসেম্বর ফাইজারের টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ১৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে পর্যায়ক্রমে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। প্রথম দফায় সম্মুখ সারির স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সিং হোমে থাকা অতিঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশি চিকিৎসক মাসুদুল হাসান (৫৮) প্রথম টিকাটি নিয়েছেন। মেট্রোপলিটন লার্নিং ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক মাসুদুল হাসান টিকা নিয়েছেন ম্যানহাটানের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ফাইজারের টিকা নেন। নিউইয়র্কে স্বাস্থ্যসেবাসহ সামনের সারির জরুরি কাজে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি জড়িত। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, পুলিশ, ট্রাফিক, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাব চালানোসহ বিভিন্ন প্রান্তিক কাজেও জড়িত রয়েছেন আরও হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি। এদের মধ্যেই ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যেই টিকা নিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে ফাইজারের টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয় গত ২ ডিসেম্বর। হ্যাম্পস্টেড এলাকার রয়্যাল ফ্রি হসপিটালে সহকারী নার্স হিসেবে কর্মরত রেহানা আক্তার প্রথম বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে টিকা নিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের রেহানা পূর্ব লন্ডনের রেডব্রিজ এলাকার বাসিন্দা। রেহানা গত ১০ ডিসেম্বর বিকাল ৫টায় রয়্যাল ফ্রি হসপিটালে প্রথম ডোজের টিকা নেন। রেহানার পরে যুক্তরাজ্যে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি ইতিমধ্যেই নিয়েছেন করোনার টিকা। নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন আরও অনেকে। অবশ্য লন্ডনে বয়স্কদের কেউ কেউ টিকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে মহামূল্যবান টিকাগুলোকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সেখানকার আগ্রহী বাংলাদেশির শিক্ষার্থীদের শরীরে পুশ করার ঘটনাও আছে।

সর্বশেষ খবর