শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পুলিশ হেফাজতে সু চি, অসহযোগ বিক্ষোভ অব্যাহত

প্রতিদিন ডেস্ক

পুলিশ হেফাজতে সু চি, অসহযোগ বিক্ষোভ অব্যাহত

সামরিক বাহিনী সমর্থিত পুলিশ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে নিজের বাসভবন থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। বলা হয়েছে, তাকে দুই সপ্তাহ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার বিরুদ্ধে দেশের আমদানি ও রপ্তানি আইন ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটির রাজধানীজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন,  বিবিসি। একটি সূত্রে খবর অনুযায়ী, পুলিশ এনএলডি নেত্রী সু চিকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে। এনএলডির পক্ষ থেকেও এ তথ্য জানানো হয়েছে। দলের মুখপাত্র কি?টো তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল জানান, সু চি?কে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। বরখাস্ত রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টকেও বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অসহযোগ অব্যাহত : মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই সেখানে অভ্যুত্থানবিরোধী অসহযোগ শুরু হয়েছে। চিকিৎসাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি অনেকে বাড়িতে বসেও বিভিন্ন কায়দায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ অসহযোগ থেকে দানা বাঁধছে আন্দোলন। এতে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ মানুষকে রাস্তায় নামতেও দেখা গেছে। গতকাল প্রথমবারের মতো মান্দালয় শহরে এক দল বিক্ষোভকারীকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে,  বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা বিভিন্ন ব্যানারের একটিতে লেখা ছিল, ‘সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিক্ষোভ।’ আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘আমাদের গ্রেফতার হওয়া নেতাদের এখনই মুক্তি দিন, এখনই মুক্তি দিন।’ মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা বিক্ষোভের পর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা এটাই প্রথম। পরে বিক্ষোভস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজিয়ে আর বাড়িতে থালা-বাসন পিটিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। এক বিক্ষোভকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের সংস্কৃতিতে ড্রাম পেটানোর মানে হলো শয়তানদের লাথি দিয়ে বিদায় করা।’ তবে ওই ব্যক্তি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন মিয়ানমারের ৩০টি শহরের ৭০টি হাসপাতাল ও মেডিকেল বিভাগের কর্মীরা। বুধবার থেকে এ কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হিমশিম খাওয়া অসহায় জনগণের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকেই ঊর্ধ্বে রেখেছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১০০-এরও বেশি মানুষ মারা গেছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাণহানি। অবৈধ সামরিক সরকার যারা কিনা আমাদের দরিদ্র রোগীদের প্রতি এতটুকু সম্মান দেখাতে পারেনি, তাদের যে কোনো আদেশ মানতে আমরা অস্বীকৃতি জানাচ্ছি।’ এদিকে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও সু চির ঘনিষ্ঠ সহযোগী উয়িন হোতেইনও মঙ্গলবার সেনা শাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগ চালাতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নেপিডোতে অবস্থিত ছোট একটি দলীয় কার্যালয় থেকে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের অভিশাপ আমাদের দেশের মূলে ঢুকে গেছে। আর সে কারণে আমাদের দেশ এখনো দরিদ্র। আমাদের অসহায় নাগরিকদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ও হতাশ। ২০২০ সালে যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন তাদের সবারই উচিত অং সান সুচির কথামতো অসহযোগ চালানো।’ সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিক্ষোভ ঠেকাতে মিয়ানমারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিতে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের নির্দেশ দিয়েছে সামরিক সরকার। যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়েছে, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং এর নেতৃত্বে অভ্যুত্থানকারী সামরিক কর্মকর্তারা ১১ সদস্যের একটি সুপ্রিম কাউন্সিল গঠন করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকার উদ্যোগী হয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব গতকাল নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবেই ভারত এ উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি জানান, ভারত অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে মিয়ানমারের ঘটনাবলীর ওপর নজর রেখে চলেছে।

অভ্যুত্থান ‘ব্যর্থ করার’ আহ্বান জাতিসংঘের : জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করে এই অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ে মূল ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোকে সক্রিয় করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করব আমরা। নির্বাচনের ফল ও জনগণের ইচ্ছা উল্টে দেওয়া পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এটি দেশ শাসনের উপায় নয় আর এটি সামনে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো পথ নয়, এটি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে বলে আশা করছি আমি।’ মিয়ানমারে সাংবিধানিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য একমত হবে বলে আশাবাদী আমি।’

সর্বশেষ খবর