শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করে শপথ সু চির দলের ৭০ এমপির

সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ছাড়তে বললেন বাইডেন

প্রতিদিন ডেস্ক

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করে শপথ নিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চির দলের ৭০ জন এমপি। দেশটির পার্লামেন্ট বাতিলের তিন দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার অনানুষ্ঠানিক এ শপথ নেন তারা। দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এ খবর জানিয়েছে। এদিকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক হুঁশিয়ারিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন।

ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, সু চির দল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি-এনএলডির ৭০ এমপির অনানুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠান রাজধানী নেপিদোর একটি সরকারি গেস্টহাউসে আয়োজন করা হয়। স্বাভাবিক সময়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনকালে এমপিরা এখানে অবস্থান করেন। গত বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৪০০ এমপি এখানে অবস্থান করছিলেন। তার বেশির ভাগই ছিলেন এনএলডির। তবে বুধবার ক্ষমতা গ্রহণকারী সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয় এমপিদের। তখন ৭০ জন এমপি এ নির্দেশ উপেক্ষা করে সেখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সংখ্যায় কম হওয়ায় সেনা কর্তৃপক্ষ শনিবার পর্যন্ত তাদের থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। জানা গেছে, এ সুযোগে বৃহস্পতিবার এমপিরা একত্রিত হয়ে অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করে নিজেরাই শপথ নেন। এনএলডির এমপি ডাউ ফাইয়ু ফাইয়ু বৃহস্পতিবারের এ আয়োজন পার্লামেন্ট অব্যাহত রাখা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে এমপিরা যেখানে উপস্থিত আছেন সেখানে স্থান কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, ‘জনগণের অনুমোদিত এমপি মর্যাদা আমাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমরা মানুষের এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছি।’ তিনি আরও জানান, যেসব এমপি বাড়িতে চলে গেছেন তারাও শিগগিরই শপথ নেবেন। অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনেকেই হাত তালি দিয়ে এ শপথ গ্রহণকে স্বাগত জানান। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ধীরে ধীরে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হচ্ছে। ফলে আগের মতো এবার শাসন করা সেনাবাহিনীর জন্য সহজ নাও হতে পারে।

ক্ষমতা ছাড়ুন : বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ছাড়তে এবং গত সপ্তাহের অভ্যুত্থানে আটক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত প্রথম বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বাইডেন জানান, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী জেনারেলদের ক্ষমতা দখল, নোবেলজয়ী অং সান সু চিসহ নির্বাচিত রাজনীতিক ও বেসামরিকদের গ্রেফতার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, গণতন্ত্রে কোনো শক্তির কখনই জনগণের ইচ্ছাকে বদলে দেওয়ার আকাক্সক্ষা কিংবা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ফল মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, বার্মার (মিয়ানমার) সেনাবাহিনীর উচিত যে ক্ষমতা তারা দখল করে রেখেছে তা ছেড়ে দেওয়া এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আটক অন্যদের মুক্তি দেওয়া, টেলিযোগাযোগে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া এবং সহিংসতা থেকে বিরত থাকা।

আসিয়ানের বৈঠক চায় ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া : সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের বিশেষ বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। গতকাল দুই দেশের নেতাই এ আহ্বান জানান।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, ‘দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসিয়ান-প্রধানের সঙ্গে কথা বলে মিয়ানমার বিষয়ে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।’ বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া সফরে আছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। তিনি বলেন, ‘এ অভ্যুত্থান দেশটিতে (মিয়ানমার) গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পথে এক পা পিছিয়ে যাওয়া।’

সু চির ডান হাত উইন টাইনও গ্রেফতার : শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি-এনএলডির জ্যেষ্ঠ এক নেতাকে গ্রেফতার করে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরাল করার বার্তা দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গতকাল ভোরের আগে আগে উইন টাইনকে ইয়াঙ্গুনে তার মেয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে এনএলডির গণমাধ্যম কর্মকর্তা কি টোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে স্ট্রেইট টাইমস। বিবিসিকে টাইন রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তৎক্ষণাৎ উইন টাইন জানিয়েছেন, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তাকে রাজধানী নেপিদোয় নিয়ে যাচ্ছেন। এনএলডির ৭৯ বছর বয়সী এই নেতা সু চির খুবই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে পরিচিত। মিয়ানমারে এ দফার অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী ও এর প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সমালোচনা করে একাধিক সাক্ষাৎকারও দিয়েছিলেন তিনি। কয়েক দিন আগে স্থানীয় ম্যাগাজিন ফ্রন্টিয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাইন অভ্যুত্থানের কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘অসম্মানের ভিতর দিয়ে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

অবশেষে বিবৃতি দিল জাতিসংঘ : অবশেষে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সেই সঙ্গে দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সংস্থাটির নিজস্ব সংবাদমাধ্যম ‘ইউএন নিউজে’ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এর এক দিন আগে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিতে জাতিসংঘকে বাধা দেয় দেশটির ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীন। এ বিষয়ে দেশটি অবস্থান পরিবর্তন করলে এ বিবৃতি এলো নিরাপত্তা পরিষদ থেকে। সব বন্দীর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয় বিবৃতিটিতে। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখা, সহিংসতা থেকে বিরত থাকা এবং মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দেওয়া হয়। বিবৃতিতে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, ভৌগোলিক অখন্ডতা ও ঐক্যের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। রাখাইন অঙ্গরাজ্যের সংকট সমাধান, বাস্তুচ্যুতদের স্বেচ্ছায় নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। তবে বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দ উহ্য রাখা হয়। এ ছাড়া দেশটির নাগরিকসমাজ, গণমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা নিয়েও উদ্বেগ জানায় নিরাপত্তা পরিষদ।

সর্বশেষ খবর