মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
কর্মসূচি নিয়ে দুই দল মুখোমুখি

কঠোর হাতে দমন করবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

কঠোর হাতে দমন করবে আওয়ামী লীগ

বিএনপি ‘মানববন্ধন ও সমাবেশ’ কর্মসূচি গণতান্ত্রিক উপায়ে ‘শান্তিপূর্ণ’ভাবে পালন করলে স্বাগত জানাবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে রাজপথে সহিংসতা করলে ‘কঠোর হস্তে দমন’ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। একই সঙ্গে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সমাবেশ, জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সব শাখা এই কর্মসূচি পালন করবে। দলের নীতিনির্ধারকরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রমতে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে পাঁচ বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। হঠাৎ করে বিএনপির এই ঘোষণা রাজনৈতিক ‘দুরভিসন্ধি’ ও স্থিতিশীল সরকারকে ‘অস্থিতিশীল’ করার গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, দেশে এখন পৌর নির্বাচন চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি ভোট হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা নেই। কিন্তু হঠাৎ নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা কর্মসূচির আড়ালে সন্ত্রাস করে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মাঠে অরাজকতা করলে কঠোর হস্তে দমন করবে সরকার।  এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কোনো কর্মসূচি যে কেউ নিতেই পারে। তাদের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক অধিকারের দোহাই দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল রাজপথে সহিংস কর্মসূচি করে তাহলে সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে। সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগও মাঠে তাদের মোকাবিলা করবে।’  আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মার্চ মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক কমে আসায় আবার রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো মূল দলের সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মসূচি পালন করবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতিমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি তিনি ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সব শাখা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সমাবেশ, জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে। এ বিষয়ে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা স্ব-স্ব বিভাগের কর্মসূচি সমন্বয় করবেন বলে জানান তিনি।

বিএনপির কর্মসূচি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। কিন্তু সমাবেশের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শক্তহাতে তা দমন করা হবে।’ দলীয় সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক কমে আসায় তৃণমূলে আবার সম্মেলন শুরু হচ্ছে। চলতি মাসেই কমপক্ষে ১০টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশের আড়ালে যেন অরাজকতা তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি কমে আসায় আমরা তৃণমূলে সম্মেলন শুরু করেছি। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, ১৪ ফেব্রুয়ারি তাড়াশ, ২৭ ফেব্রুয়ারি উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহরে ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২৪ ফেব্রুয়ারি আটঘরিয়া, ২৫ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা হচ্ছে, তখন জনগণ দ্বারা ধিকৃত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা জনগণমত গড়ে তুলব। তাদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করব।

সর্বশেষ খবর