মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
কর্মসূচি নিয়ে দুই দল মুখোমুখি

ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় আবার রাজপথে গড়াচ্ছে রাজনীতি। নানা ইস্যুতে ফের মাঠে নামছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে শোডাউন করে দলটি। বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় সব বক্তাই আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বার্তা দেন। একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে কারামুক্ত করতে না পারার ব্যর্থতাও স্বীকার করেন তারা।

দলের দুই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সমাবেশে বলেই ফেলেন, ‘আমার কারাবন্দী নেত্রী ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা এতই দুর্ভাগা, এতই ব্যর্থ যে, আপনাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। বেগম খালেদা জিয়া সারাজীবন বন্দী থাকবেন এমন কথাও বলছি না। আজকের এই প্রতিবাদ সমাবেশ বা মানববন্ধন প্রমাণ করেছে-খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিলে তিলে এই বন্ধন বড় হবে। দলকে সুন্দরভাবে সুগঠিত করে ইনশা আল্লাহ অচিরেই আমরা মাঠে নামব। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং তারেক রহমানকে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনব।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, আন্দোলন-সংগ্রাম করে বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবে রাজপথ ছাড়ব না। আমাদের কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে। আমাদের রাজপথ দখলে নিতে হবে এবং সকল পথ-ঘাট আজকে জনগণের দখলে নিতে হবে।’ বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দল গোছানোর পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে চলতি বছর মাঠে সরব থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। করোনা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হলে চলতি এপ্রিলের মধ্যে ছোট পরিসরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হতে পারে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি সরকারবিরোধী ছোট বড় দল নিয়ে বৃহত্তর মোর্চা তৈরির চেষ্টা করছে দলটি। এরপর সরকারবিরোধী বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা দলটির। বেগম জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে রাজপথে সরব থাকবে বিএনপি।

সম্প্রতি ভোট ‘কারচুপি’র প্রতিবাদে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ছয় বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দল সমর্থিত সিটি মেয়র প্রার্থীরা সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া বিএনপি মনোনীত ধানের শীষে মেয়র প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার এই কর্মসূচির ডাক দেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সমাবেশ। এ ছাড়া বরিশালে ১৮ ফেব্রুয়ারি, খুলনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাজশাহীতে ১ মার্চ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩ মার্চ এবং ঢাকা দক্ষিণ ৪ মার্চ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। তৃণমূল চাঙা করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপর অন্যান্য বিভাগের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে জেলাপর্যায়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে মজিবর রহমান সরোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ভোটাধিকারের জন্য আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ছয়টি মহানগরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জনতার সামনে ভোট কারচুপির বিষয়গুলো তুলে ধরতে চাই। ভোটের অধিকারের কথা বলতে চাই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলতে চাই। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমাদের দাবি মানতে হবে। জনগণকে নিয়ে আমরা মাঠে থাকব।’ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর রাজপথে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। এমনকি দলের প্রধান বেগম জিয়ার মুক্তি ইস্যুতেও একরকম দায়সারা গোছের কর্মসূচিতেই ব্যস্ত থেকেছে দলটি। তবে সামনে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে যেতে চায় দলটি। বিএনপির হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমেই দলের সর্বস্তরে গতিশীলতা আসবে। নেতা-কর্মীদের হতাশা কমাতে ও মনোবল বৃদ্ধিতে দেশজুড়ে সমাবেশ করা হবে। দলের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে পাশে চায় বিএনপি। এ জন্য জনসমস্যা নিয়েই মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। তবে ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি নয়, গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েই মাঠে থাকবে দলটি। সরকারের কোনো প্রকার উসকানিতেও পা না দিতে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি সিনিয়র এক নেতা জানান, সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে সহসাই সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। তবে পর্যায়ক্রমে ইস্যুভিত্তিক সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান, রোড মার্চ, মহাসমাবেশ কর্মসূচির ওপরই জোর দিয়ে সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারসহ সামনের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়ে আন্দোলনের ইস্যু আরও জোরালো করার চিন্তাও রয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এরই মধ্যে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামনে আরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। বেগম জিয়ার মুক্তি ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায় করাই আমাদের লক্ষ্য।’

সর্বশেষ খবর