বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয় কেটে টিকায় উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয় কেটে টিকায় উৎসব

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল টিকা নেওয়ার অপেক্ষা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘড়ির কাঁটায় সময় বেলা ১১টা। মাস্ক, ফেসশিল্ড পরে হুইল চেয়ারে বসে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কেন্দ্রে আসেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। টিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা সকলে ভ্যাকসিন নেন। এটা আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য প্রয়োজন, সমাজের জন্য প্রয়োজন। ৮৭ বছর বয়স আমার, শেষই হয়ে গেছে জীবন। আমি টিকা নিচ্ছি।’

গতকাল দিনভর টিকা কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। টিকা গ্রহণে ব্যাপক সাড়া মিলছে। আগে যাদের মধ্যে কিছুটা ভয়ভীতি ছিল তারাও এখন আগ্রহী হয়ে নিবন্ধন করে টিকা নিচ্ছেন। বয়সসীমা নামিয়ে আনাসহ সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপে সহজ হয়েছে টিকা গ্রহণ পদ্ধতি। এ জন্য কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে টিকাগ্রহীতার ভিড়। গতকাল বিএসএমএমইউ কেন্দ্রে সপরিবারে টিকা নিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা নিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। গত সোমবার বিএসএমএমইউ কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। প্রতিদিন বাড়ছে টিকার নিবন্ধনকারীর সংখ্যা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৬ লাখ ৯০ হাজার ৬৩ জন। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৪ হাজার ৫৮৬ জন এবং নারী ২৬ হাজার ৪৯৬ জন।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্র পরিদর্শনে এসেছিলেন স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে প্রথম দিকে কারও কারও মধ্যে ভয় থাকলেও এখন তা কেটে গেছে। যতটা ভয়ভীতি ছিল, এখন একেবারেই নেই; একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাসের গণটিকাদান শুরুর পর গতকাল ছিল তৃতীয় দিন। ঢাকা মেডিকেলের টিকা কেন্দ্রে আগের দুই দিনের চেয়ে গ্রহীতার ভিড় বেশি দেখা গেছে। তাদের মধ্যে বয়স্ক নাগরিকও রয়েছেন। আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের লাইন আছে, টিকা দেওয়ার কোনো ঝামেলা নেই। সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি মানুষ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন সচিব।

ইতিমধ্যে ৬ লাখের বেশি মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব আরও বলেন, ‘আমরা চাইছি মানুষ নিরাপদে এবং আনন্দের সঙ্গে টিকা নেবে। ভিড় করার দরকার নেই। আমাদের সমস্ত ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। স্পটেও রেজিস্ট্রেশন করছি, কিন্তু কোনটা করছি? বয়স্ক মানুষ চলে এসেছেন, উনার রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছি। অস্থিরতার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে। আরও ভ্যাকসিন আমরা পাচ্ছি বিভিন্ন উৎস থেকে থেকে।’

বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। সরকারের কেনা এ ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজের মধ্যে প্রথম ৫০ লাখ ডোজ গত মাসে হাতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ভারতের উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য সচিব জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফরম কোভ্যাক্স থেকেও বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের টিকা পাবে। এ ছাড়া ফাইজারের কিছু টিকাও আসবে। আর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রতি মাসে যে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা, তার ফেব্রুয়ারির চালান আসার তারিখ চূড়ান্ত না হলেও সময়মতোই তা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। আবদুল মান্নান বলেছেন, সব মিলিয়ে দেশে টিকা নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলেই সরকার আশা করছে। যতদিন জনগণ টিকা নিতে চাইবে, টিকার মূল্য যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সুরক্ষা দিতে মানসিকভাবে ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন। যে টিকা বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিটি ভায়ালে থাকে ১০টি ডোজ। অর্থাৎ, প্রতিটি ভায়াল খোলার পর ১০ জনকে টিকা দেওয়া যায়।

এ ক্ষেত্রে কোনো অপচয় হওয়ার সুযোগ থাকছে কি না- সেই প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, যে কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ‘ওয়েস্টেজ’ ধরেই হিসাব করা হয়। তারপরও আমরা বলেছি ১০ এর গুণিতক লোক না আসা পর্যন্ত ভায়াল না খুলতে। তবে আমরা হিসাব করে দেখেছি, অপচয় ১০ শতাংশ এখনো হয় নি। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দিয়েছেন ৭৬০ জন, বিএসএমএমইউতে টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৪৯৪ জন, সচিবালয় ক্লিনিকে ৩৮০ জন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ৬১০। ঢাকার ৪৬ কেন্দ্রে ও সারা দেশে একযোগে চলছে টিকাদান।

আমাদের নাটোর প্রতিনিধি জানান, দেশব্যাপী করোনার টিকা দেওয়ার প্রথম দিনে নাটোরের গুরুদাসপুরে ৪১ জন টিকা গ্রহণকারীকে ৫০০ টাকা করে উপহার দিয়েছেন সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস। নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল কুদ্দুস গত রবিবার সকালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি টিকা গ্রহণকারীদের জন্য ওই উপহারের ঘোষণা দেন। আবদুল কুদ্দুস বলেন, করোনা টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতেই তিনি ব্যক্তিগত অর্থায়নে টিকা গ্রহণকারীদের জন্য স্বল্পপরিসরে উপহারের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে মানুষ করোনার টিকা নিতে আরও আগ্রহী হয়।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জে তিন দিনে করোনাভাইরাসের টিকা নিলেন ১ হাজার ৭৭৭ জন। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, গতকাল টিকা গ্রহণ করেছেন ৭৩৭ জন। টিকা গ্রহীতাদের কারও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীতে তৃতীয় দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন। গতকাল ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর