বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
এবার জিয়ার খেতাব বাতিল নিয়ে বিতর্ক

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা

-------- মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে। সিঙ্গাপুর থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় সিঙ্গাপুর থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেন। বিএনপি আজ এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবে। জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বীরউত্তম বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় মশাল মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

নিপুণ রায় চৌধুরী জানান, পুলিশের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আতিকুর রহমান মানিক, সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট শাহীন, মাসুদুর রহমান, ওমর ফারুক কাউসারসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। পুলিশ এ সময় যুবদল নেতা শরীফসহ চারজনকে আটক করে নিয়ে গেছে বলে জানান মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা। জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোনে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সিদ্ধান্তকে আমি মনে করি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। এই সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, তাদের আমি কখনই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনে করি না। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং পুরোপুরিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কলঙ্ক লেপন করা হলো। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের অপকর্ম এবং বেরিয়ে আসা সব দুর্নীতি থেকে জনগণের দৃষ্টি দূরে সরিয়ে নিতেই এটা করা হয়েছে। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। এ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের শুধু নয়, বাইরের বহু লেখকের বহু লেখা আছে, যার প্রমাণ রয়েছে। এই যে বীরউত্তম খেতাবটি তিনি পেয়েছিলেন, সেই খেতাব পেয়েছিলেন কিন্তু স্বাধীনতার পরের যে সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের যে সরকার, সেই সরকারই এই খেতাব তাকে দিয়েছিল।

চিকিৎসার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে যান বিএনপি মহাসচিব। স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও তার সঙ্গে আছেন। ফখরুল জানান, সেখানে ফারার পার্ক হাসপাতালে তিন দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। এটা শেষ হলে আবার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হবে।

এর আগে সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এতে নেতৃত্ব দেন। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে বিএনপি নেতা সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির হাবিবুর রশিদ হাবিব, মহানগর দক্ষিণ যুবদলের রফিকুল আলম, গোলাম মাওলা শাহিন, ছাত্রদলের আশরাফুল আলম লিঙ্কন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘এটা মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা’ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ঘরানার শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এমন সিদ্ধান্তকে ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। গতকাল সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এক যুগের বেশি সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করার যে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র চলছে, খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত এরই অংশ।

রবের অভিমত : জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, যারা দেশমাতৃকার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব অর্জন করেছেন তাঁদের খেতাব বা পদক বাতিল করার সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না। প্রতিহিংসামূলক কোনো সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ন্যায্যতা’কে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। রব গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

সৈয়দ ইবরাহিমের নিন্দা : জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক এক বিবৃতিতে বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের গুরুত্ব যথার্থই অনুধাবন করেছিলেন। সে কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানীদের বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। এখন যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব কেড়ে নেওয়া হয়, তবে সেটা হবে কার্যত বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর