বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দীপন হত্যায় আট জঙ্গির মৃত্যুদন্ড

আদালত প্রতিবেদক

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে নিহত দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাকে কাঁদতে দেখা যায়। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ। কাল আমার মামা মারা গেছেন। আমরা এ রায় নিয়ে সন্তুষ্ট। আজকে আমরা যে রায় পেয়েছি, এর জন্য সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খাইরুল ইসলাম লিটন জানান, সাক্ষীরা মাননীয় আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলো- বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির জানান, আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক। বাকি আসামিরা কারাগারে আছে। রায় ঘোষণার সময় তাদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামিরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে মামলার কাগজপত্রে বলা হয়েছে। এদিকে রায় ঘিরে আদালতের ভিতরে ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো এলাকায় কড়া নজরদারি চালায়। কাশিমপুর কারাগার থেকে ছয় আসামিকে সকালেই প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাদের গায়ে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিত রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়।

 এ ঘটনায় আসামিদের কারও ভূমিকা ছোট-বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় অংশগ্রহণকারীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে। এ মামলার আসামিদের লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া এবং মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘিœত করা। আর এসব কিছুর উদ্দেশ্য হলো মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেওয়া। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করে দেওয়া। বিচারক বলেন, দীপনকে হত্যার জন্য আসামি মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক নির্দেশ, প্রশিক্ষণ এবং মূল হত্যাকারীদের অর্থায়ন করে। আর অপর আসামি আকরাম হোসেনের পরিকল্পনায় আসামি মইনুল হাসান শামীম অস্ত্র সংগ্রহ, খুনের পরামর্শ এবং মূল হত্যাকারীদের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেয়। আরেক আসামি মোজাম্মেল হুসাইন সায়মন হত্যা পরিকল্পনায় অংশগ্রহণসহ ঘটনাস্থল রেকি করায় এবং আসামি আবদুস সবুর হত্যাকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়। আর আবু সিদ্দিক সোহেল ও খাইরুল ইসলাম ঘটনাস্থল রেকি করে এবং আরেক আসামি শেখ আবদুল্লাহ টাকা হস্তান্তর করে। তারা দীপন হত্যাকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের অভিন্ন অভিপ্রায় ছিল ব্লগার, প্রকাশক ও সমকামীদের হত্যার অংশ হিসেবে ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে খুন হন ফয়সাল আরেফিন দীপন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ আদালতে আসামিদের বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত।

সর্বশেষ খবর