শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অবশেষে ট্রাম্পের বিচার শুরু

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

অবশেষে ট্রাম্পের বিচার শুরু

ছয় রিপাবলিকানের সমর্থনে ইউএস সিনেটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার শুরু হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্ণে উভয়পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনের পর ভোটে দেওয়া হয় বিচার প্রক্রিয়া সংবিধানসম্মত কি না তা যাচাইয়ের জন্য। সেই ভোটে ১০০ সিনেটরের ৫৬ জন বিচারের পক্ষে এবং ৪৪ রিপাবলিকান সিনেটর বিপক্ষে রল্যান্ড-ডেমোক্র্যাট) জেমি রাস্কিন ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের নির্দেশে ও মদদে ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উপস্থাপনে ১৩ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করেন। সব সিনেটরের সঙ্গে সরাসরি সম্প্রচারিত টিভির পর্দায় কোটি কোটি মানুষ তা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেন। রিপাবলিকানরা এ বিচারের বিরোধিতায় যুক্তি প্রদর্শন করেছিলেন যে, ক্ষমতায় নেই ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সাধারণ একজন নাগরিক। তাই তার বিরুদ্ধে সিনেটে ইমপিচমেন্টের ট্রায়াল হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টকে সিনেটের কাঠগড়ায় উঠানোর ক্ষমতা দেয়নি। ট্রাম্পের আইনজীবীদের এমন বক্তব্য খ-নে অতীতের বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় না থাকা জনপ্রতিনিধিদের বিচার প্রসঙ্গ আনেন ট্রায়াল ম্যানেজাররা। ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তির অবতারণাকালে দাবি করেন, ক্যাপিটল হিলে যারা আক্রমণ চালিয়েছে, তা-ব করেছে, ভাঙচুর ও নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা ট্রাম্পের সমর্থক নয়, তারা উচ্ছৃঙ্খল জনতার অংশ, তাই তাদের অপকর্মের দায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিতে পারেন না। এমন বক্তব্য ধোপে টেকেনি। কারণ, ভিডিও ফুটেজেই ট্রাম্পের আহ্বান রয়েছে, নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাই হামলা না চালালে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না বলেও ট্রাম্পের মন্তব্য রয়েছে। দিনভর জঙ্গি তৎপরতার পর সন্ধ্যায় টাম্পের আহ্বান পেয়েই জঙ্গিরা ক্যাপিটল হিল ত্যাগ করেন, সেটিও স্পষ্টভাবে ফুটেজে দেখা গেছে। ওই জঙ্গি হামলার ভিকটিম শুধু ডেমোক্র্যাটরা নন, সব রিপাবলিকান সিনেটর আর কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে ট্রাম্পের রানিংমেট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় এ সময়।

তবুও ভোটে ৫০ রিপাবলিকান সিনেটরের ৪৪ জনই ট্রাম্পের পক্ষাবলম্বন করায় অনেকেই এই রাজনৈতিক দলের নীতিনৈতিকতা নিয়ে কড়া সমালোচনা করছেন। শুধু তাই নয়, সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে এবং ডেমোক্র্যাটদের আসন বেড়ে যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অভিমত পোষণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাতে ট্রাম্পের অপকর্মের পক্ষে ডেমোক্র্যাট-ম্যানেজাররা বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। সে সময় তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধের ধারাবিবরণী দেবেন। সমর্থকদের উসকানির পর ক্যাপিটল হিলে হামলায় উজ্জীবিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেটিও যুক্তির মাধ্যমে ঘটনা পরম্পরায় উল্লেখ করবেন তারা। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর সেই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির নানা অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প। অন্তত ৬০টি মামলা করেছিলেন। কিন্তু কারচুপি, ভোট ডাকাতির পক্ষে কোনো ডকুমেন্ট উপস্থাপনে সক্ষম না হওয়ায় সব মামলাই খারিজ হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন স্টেটের রিপাবলিকান গভর্নররাও সার্টিফিকেট দিয়েছেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি হয়নি। ট্রাম্পের তদানীন্তন আইনমন্ত্রী, এফবিআই প্রধান এবং বিচার বিভাগীয় পরিদর্শকরাও দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, স্মরণকালের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে ৩ নভেম্বর। তারপরও ট্রাম্প জনতার রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার প্রচলিত রীতি সম্পন্নকালে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে আমেরিকার মান-মর্যাদাকে ধুুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হবে শুনানিতে। অন্যদিকে এ যুক্তিকে খ-নের চেষ্টা চালাবেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা। এদিকে সিনেট কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী রবিবারই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার পর্বের সমাপ্তি ঘটবে সিনেটরদের ভোটের মধ্য দিয়ে। সে সময় ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ১৭ রিপাবলিকান যুক্ত হলেই ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে সিনেটের ৬৭ ভোট প্রয়োজন হবে। সে জন্য ১৭ রিপাবলিকানের সমর্থন দরকার। কার্যত তা কখনই সম্ভব হবে না বলে অনেকের ধারণা। অর্থাৎ ট্রাম্পের পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার পথ খোলাই থাকবে।

সর্বশেষ খবর