শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল উৎপাদনে বিপ্লবে দেশ

বিনিয়োগে চোখ বিশ্বখ্যাত কোম্পানির

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মোটরসাইকেল উৎপাদনে বিপ্লবে দেশ

মোটরসাইকেল তৈরির কাজ চলছে দেশের একটি কারখানায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে ভালুকার আগে সিডস্টোর নামক জায়গা থেকে সখীপুর রোড ধরে কিছুটা এগোলেই হাতের বাঁয়ে গেটের ওপরে নীল রঙে ইংরেজিতে লেখা ‘রানার’। গেট পেরোতেই চোখে সবুজ গালিচার মাঝে চোখে পড়ল বিশালাকারের মোটরসাইকেলের ভাস্কর্য। এরপর আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড কোম্পানি রানার অটোমোবাইল গ্রুপের নিজস্ব কারখানা, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে।

এক দশক আগেও দেশে বার্ষিক মোটরসাইকেলের বাজার চাহিদা ছিল ৫০ হাজারের মতো। এখন দেশি কোম্পানি রানার একাই বছরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে। ২০১৬ সালেও দেশে মোটরসাইকেলের বাজার চাহিদা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার, যার প্রায় পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হতো। গত চার বছরে সেই বাজার চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। এভাবেই দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্প। আর এই অগ্রগতির পালে হাওয়া দিতে এগিয়ে আসছে বিশ্বের মোটরসাইকেল শিল্পের জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশের মোটরসাইকেলের বাজার ছিল আমদানিনির্ভর। দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ শিল্পে সুবিধাজনক শর্তের বিপরীতে কর ছাড় দেয় এনবিআর। এতে বাহনটির দাম ক্রেতার নাগালে চলে আসে। ফলে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ হারে বাড়তে থাকে দেশের মোটরসাইকেলের বাজার। ২০১৯ সালে ৪ লাখ ৪০ হাজার মোটরসাইকেল বাজারজাতকরণ হয়, যার ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত।

বড় সম্ভাবনা মোটরসাইকেল শিল্পে : একসময় ভারতের বাজারে যেসব কোম্পানি যৌথ বিনিয়োগে যুক্ত হয়েছিল এখন তারাই বাংলাদেশে চোখ রাখছে। তারা মনে করছে ভারতের পর দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ, যেখানকার মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বয়সে তরুণ। উপরন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, করোনা মহামারীসহ নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও যে দেশটির অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বিগত এক দশকে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা রাখতে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও ওপরের দিকে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জরুরি প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। ফলে দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে। সেই তাগিদ থেকে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল এখন প্রয়োজনীয় একটি বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে মোটরসাইকেল শিল্পে বিশ্বের গুটিকয়েক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বাজার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে মনে করছে এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। জাপানের বহুজাতিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার এক বাজার জরিপ বলছে, দেশে প্রতি ১৬১ জনের একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে ১ জন এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি ৪ জনে ১ জন ব্যক্তি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বাংলাদেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। শিল্প মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল শিল্প নীতিতে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ লাখ এবং ২০২৭ সাল নাগাদ এর দ্বিগুণ মোটরসাইকেল প্রস্তুত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

দেশে মোটরসাইকেলের ৭ কারখানা : দেশি কোম্পানি রানারসহ বাংলাদেশে এখন ৭টি ব্র্যান্ডের কোম্পানির কারখানা রয়েছে, যারা দেশেই বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। এর বাইরে কিছু উচ্চ প্রযুক্তির প্রিমিয়াম মডেল সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে। বিদেশি যেসব ব্র্যান্ড বাংলাদেশে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কারখানা স্থাপন করেছে সেগুলো হচ্ছে : বাজাজ, টিভিএস, হোন্ডা, হিরো, ইয়ামাহা ও সুজুকি। ভারতের বাজাজ ব্র্যান্ড দেশের উত্তরা মোটরসের সঙ্গে মিলে সাভারের জিরানিতে স্থাপিত কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। দেশে টিভিএস ব্র্যান্ডের বাজারজাত করে সনি-র‌্যাংগস গ্রুপ। তাদের কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীতে। সনি-র‌্যাংগসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিয়ান মোটরস ও ভারতের টিভিএস অ্যান্ড সন্সের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানির নাম টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বেসরকারি আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে ২৫ একর জমিতে হোন্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএইচএল) কারখানা স্থাপন করে বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করছে জাপানের বিখ্যাত কোম্পানি হোন্ডা। গাজীপুরের শ্রীপুরে জাপানের সুপরিচিত আরেক ব্র্যান্ড ইয়ামাহার মোটরসাইকেল সংযোজনের কারখানা করেছে এসিআই মোটরস। শুধু সংযোজন নয়, একই কারখানায় ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। জাপানি ব্র্যান্ড সুজুকিও উৎপাদিত হয় বাংলাদেশেই। সুজুকি ও র‌্যানকন মিলে গাজীপুরে কারখানা করেছে। অন্যদিকে ভারতের জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হিরো কারখানা করেছে যশোরে। নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারখানা করেছে হিরো মোটোকর্প। যশোরের এই কারখানায় বছরে দেড় লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে সক্ষম। কোম্পানির নাম এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড। আর ভালুকার সিডস্টোরে রানার গ্রুপের কারখানা। জানা গেছে, এক দশক আগে দেশীয় বাজারে মোটরসাইকেল উৎপাদনে নামে ওয়ালটন ও রানার গ্রুপ। তবে ওয়ালটন মোটরসাইকেল উৎপাদন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পর এখন দেশীয় কোম্পানি হিসেবে বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে দেশীয় ব্র্যান্ড রানার। ২০১২ সালে রানার অটোমোবাইলস রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে। ময়মনসিংহের ভালুকায় কোম্পানিটির নিজস্ব কারখানায় এখন ১৪টি মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদন হচ্ছে, যা দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশে রপ্তানির জন্য কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে। ফলে নেপাল ও ভুটানের বাজার ছাড়িয়ে শ্রীলঙ্কা এবং আফ্রিকার বাজারে বাংলাদেশে তৈরি মোটরসাইকেল রপ্তানি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে দেশীয় এই কোম্পানিটি। শুধু তাই নয়, একসময় দেশীয় এই কোম্পানিটি যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদন করলেও এখন রানার কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে মোটরসাইকেলের  চেসিসসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ। সিট, পাইপ, চেইন, টায়ার, ফুয়েল ট্যাংক তৈরির জন্য গড়ে উঠছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ নতুন নতুন শিল্প।

কর সুবিধায় এগিয়ে আসছে বিদেশি কোম্পানি : বিদেশে তৈরি মোটরসাইকেল (সিবিইউ) বাংলাদেশে আমদানি করতে দেড় শ শতাংশের মতো কর দিতে হয়। এর ফলে দেড় লাখ টাকার একটি মোটরসাইকেল বাংলাদেশে আমদানির পর দাম পড়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা। দেশে বর্তমানে ৩ ধরনের কর ব্যবস্থা চালু রয়েছে এই শিল্পে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল থেকে নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করে তাদের ২৮-৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের চেয়ে কিছু কম মূল্য সংযোজন করে, সে ক্ষেত্রে মোট কর ভার ৫৯ শতাংশের মতো। আর যারা পুরো তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে, তাদের সব মিলিয়ে ১৫১ শতাংশ কর দিতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক দশক আগে মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোর চোখ ছিল ভারতে। তখন বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলো ভারতের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার পদ্ধতিতে উৎপাদনে যায়। এক পর্যায়ে ভারতীয় কোম্পানিগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর যৌথ উৎপাদন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এখন বাজাজ, টিভিএস কিংবা হিরো নিজেরাই একেকটি স্বনামখ্যাত কোম্পানি। নানা ধরনের নীতি সুবিধা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের সামনেও সেই সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে মোটরসাইকেল উৎপাদনে শুল্ক কমিয়ে নীতি সুবিধা প্রদানের ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপনে উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মোটরসাইকেলের মূল কাঠামোসহ (চেসিস) পাঁচটি প্রধান যন্ত্রাংশের কমপক্ষে একটি দেশে উৎপাদনের শর্ত দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মূলত দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন কোম্পানি। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড কেটিএম রানার গ্রুপের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের মোটরসাইকেলের দুটি মডেল বাজারে ছেড়েছে। ইফাদ গ্রুপের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসতে চাইছে বিশ্বখ্যাত আরেক কোম্পানি রয়েল এনফিল্ড।

সিসি নিয়ে জটিলতা :  বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্পে যখন বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে, তখন সবচেয়ে বড় জটিলতা দেখা দিয়েছে সিসির সীমাবদ্ধতা নিয়ে। দেশে ১৬৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল ছাড়া ও আমদানি নিষিদ্ধ। এ কারণে বিদেশি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল নিয়ে এ দেশে আসতে পারছে না। মোটরসাইকেল শিল্পের এই সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই সিসি সীমা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, মোটরসাইকেলের সিসির সঙ্গে গতির কোনো সম্পর্ক নেই। ৩০০ বা ৫০০ সিসির মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ যে গতি তোলা সম্ভব, ১৬৫ সিসি মোটরসাইকেলেও একই গতি তোলা যায়। বিশ্বের কোথাও এমন সিসি সীমা নেই। অনেকে মনে করছেন দেশীয় শিল্পে সুবিধা দিতেই সিসি সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রানার গ্রুপ বলছে, তারা নিজেরাও মোটরসাইকেলের সিসি সীমা তুলে দেওয়ার পক্ষে। রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের পরিচালক আমিদ সাকিফ খান বলেন, সিসি সীমা তুলে দিলে বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোর মোটরসাইকেল দেশে উৎপাদনে আসবে। এতে করে দেশের ভেন্ডর শিল্পে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। দেশে উৎপাদিত হাইভ্যালু মোটরসাইকেলের দাম কম হওয়ার কারণে তখন সীমিত সিসির বাইকের দাম তুলনামূলক আরও কমমূল্যে পাওয়া যাবে। সিসি সীমার সমস্যা তুলে ধরে আমিদ সাকিফ খান আরও বলেন, সিসি বেঁধে দেওয়ার কারণে আমরা দেশের জন্য এখন ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে পারি না। যদিও রপ্তানির জন্য ৫০০ সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমতি আছে রানারের, কিন্তু উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদনের আগে সেটি স্থানীয়ভাবে অন্তত ৬ মাস ট্রায়াল দিতে হয়। নিয়মিত এ ধরনের ট্রায়ালের ফলে উৎপাদিত মোটরসাইকেলের উৎকর্ষতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে নতুন নতুন মডেলে হাইভ্যালু ও প্রিমিয়াম মডেল আমদানির ফলে দেশীয় ভেন্ডর শিল্প প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে উন্নত মানের স্পেয়ার পার্টস উৎপাদনে যাবে। তখন বাংলাদেশেই উৎপাদন হবে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের বাইক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর