শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
চসিক মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আরও ৫০ হাজার ঘর নির্মাণে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়

প্রতিদিন ডেস্ক

আরও ৫০ হাজার ঘর নির্মাণে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর করে দেওয়ার জন্য আরও ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়র ও কউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসস।

নিয়ম অনুযায়ী মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাউন্সিলরদের শপথ পড়ান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে নির্বাচিত চট্টলার মেয়র, ৫৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত (মহিলা) ১৪ আসনের কাউন্সিলর শপথ গ্রহণ করেন। জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ এলাকায় গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়নের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এলাকায় দেখবেন কোনো লোক গৃহহীন আছে কিনা, আপনারা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন, আমরা কিন্তু ঘর করে দেব। একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে মুজিববর্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা সময় নিয়েছি এবং সেই সময়ের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, তাদের ঠিকানা পাবে। বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে।’ জনপ্রতিনিধিদের কভিড ভ্যাকসিন প্রদানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরে থাকতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে আপনারা যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন আর আজকে যে শপথ নিলেন সেটা মাথায় রেখেই আপনারা মানুষের জন্য কাজ করবেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন একবারেই শেষ হয়ে যায় না। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বারবার নির্বাচিত হওয়া যায়, অন্য কিছু লাগে না- এটাই আমরা বিশ্বাস করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আজকে শপথ নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের কাছে যাবেন এবং সার্বিকভাবে যেসব উন্নয়নের কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি যথাযথভাবে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়। এখানে কোনোরকম ঘাটতি যেন দেখা না দেয় এবং যেন দ্রুত হয় সেটাই আমরা চাই।’

টিকা গ্রহণে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে আনসার বাহিনীর প্রতি আহ্বান : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে টিকা গ্রহণে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে ভয় পায়, সুই ফোঁটাতেও ভয় পায়, কাজেই তারা যেন রোগাক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপটা নিয়েছি এবং সেখানে আপনাদের সহযোগিতা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪১তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের সফিপুর আনসার ও ভিডিপি একাডেমির সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। শেখ হাসিনা বলেন, টিকাদানের জন্য তাঁর সরকার যেসব ডিজিটাল সেন্টার করেছে সেখানে গিয়েই সবাই নিবন্ধন করতে পারবেন। সেখানে গিয়ে নিজে এবং পরিবারের সবাই যেন টিকা নেয় তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ১৪০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যকে সাহসিকতা ও বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রদান করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে যেন দেশের যুবসমাজ সম্পৃক্ত না হয়। এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা আপনারা রেখে যাচ্ছেন এবং এটা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ ব্যাপক কর্মসূচি আপনাদের পালন করে যেতে হবে যাতে ছেলেমেয়েরা বিপথে না যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থান তৈরিতে এ বাহিনী সার্বক্ষণিক কাজ করছে। বিশেষ করে জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নে এ বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। সুবিশাল এ বাহিনীর অর্ধেক সদস্যই নারী। সমঅধিকারের ভিত্তিতে তাদের বিনামূল্যে আয়বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠিত আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক দেশব্যাপী ২৫৯ শাখার মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ প্রদান করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহপূর্বক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার জন্য ইতিমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা এ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে এবং তারা প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা খরচও করেছেন। এখান থেকে ৫ শতাংশ সুদে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত তারা ঋণ নিতে পারেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষে আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর স্লোগান ‘মুজিববর্ষের উদ্দীপন, আনসার ও ভিডিপি আছে সারাক্ষণ’ সময়োপযোগী হয়েছে। বাহিনীর সদর দফতর, একাডেমি, রেঞ্জ, ব্যাটালিয়ন, জেলা কার্যালয়সহ প্রতিটি কার্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে চলমান মাস্টার্স কোর্সসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণসূচিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম শীর্ষক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আনসার বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ও ভিডিপির স্থাপনাসমূহের ভৌত সুবিধাদি সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের ২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন এবং ১১৪টি ভবন ও স্থাপনা সংস্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু সরকারি দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিবেচনায় দেশের প্রতিটি রেঞ্জে একজন করে ভিডিপি সদস্যের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে একই বিবেচনায় প্রতি জেলায় ভিডিপি সদস্যকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। সবার উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর