শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন কূটনীতিতে সম্পর্কের নতুন মাত্রায় বাংলাদেশ-ভারত

জুলকার নাইন

ভ্যাকসিন কূটনীতিতে সম্পর্কের নতুন মাত্রায় বাংলাদেশ-ভারত

করোনা ভাইরাসের মহামারীর মধ্যে বিশে^ যখন ভ্যাকসিনের জন্য হাহাকার চলছে তখন বাংলাদেশে চলছে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মহাযজ্ঞ। অথচ উন্নত অনেক দেশ এখনো তাদের জনগণের জন্য ভ্যাকসিনের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রতিবেশী ভারত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ পেয়েছে বিশাল পরিমাণের ভ্যাকসিন। বৈশি^ক ক্রান্তিকালে এই ভ্যাকসিন কূটনীতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, পৃথিবীর বহু দেশই কভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদনের চেষ্টা করছে। কিন্তু বিশে^র কোটি কোটি মানুষের টিকার প্রয়োজন মেটানোর মতো ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাপাসিটি বা উৎপাদন ক্ষমতা আছে একটি দেশেরই, আর সেটি হলো ভারত। বিশ্বে টিকার ৬০ শতাংশই উৎপাদিত হয় ভারতে। দেশটিতে রয়েছে টিকা উৎপাদনের অর্ধডজন বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত ভ্যাকসিন ব্যাপক হারে উৎপাদনের চুক্তি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এটি। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা মাসে পাঁচ কোটির বেশি ‘কোভিশিল্ড’ ডোজ টিকা তৈরি করছে। উৎপাদন শুরুর কয়েক দিনের মাথায় প্রতিবেশীদের উপহার হিসেবে টিকা পাঠায় ভারত। গত ২০ জানুয়ারি ভুটানকে দেড় লাখ ডোজ ও মালদ্বীপকে এক লাখ ডোজ ভ্যাকসিন অনুদান সহায়তা হিসেবে      পাঠানোর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করে। পরদিন বাংলাদেশকে উপহার দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি ২০ লাখ ডোজের চালান। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, বাংলাদেশকে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে দেওয়ার ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত দেশের বেশির ভাগ জনগণকে অবাক করেছে। কারণ এই সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টা আগেও কেউ এ জাতীয় সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস পায়নি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ভারত সরকারের কৌশলগত ভ্যাকসিন কূটনীতির অংশ। ভারত সরকারের ‘প্রতিবেশী প্রথম নীতি’ আরেক দফা প্রমাণ হলো এই ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে। গত বছর আগস্ট মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কথা রেখেছে ভারত। শুধু উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ নয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটার আগেই বাংলাদেশকে টিকা রপ্তানিও শুরু করে ভারত। সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ করা হয়েছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাকে। ফলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ বেক্সিমকোর কাছে বিক্রি করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। এর প্রথম চালান হিসেবে ৫০ লাখ ডোজ ইতিমধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি এসেছে দেশে। বাকি আড়াই কোটি ডোজ আসবে ছয় মাসের মধ্যেই।  বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশই সবচেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পাচ্ছে। ভারত সরকার যে দামে ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশও একই দামে পাচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয় ভারত, ‘ভ্যাকসিনমৈত্রী’ তারই নজির।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর