রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ সংঘর্ষ

আহত শতাধিক গ্রেফতার ২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ সংঘর্ষ

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশে গতকাল লাঠিচার্জ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জে শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। খেতাব বাতিল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য চলাকালে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত লাঠিচার্জ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। সমাবেশস্থল থেকে যুবদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকীসহ ২৫ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে বলে দাবি  করেছে বিএনপি। অন্যদিকে আগামী দিনে সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। 

পুলিশের লাঠিচার্জে আহত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের অবস্থা গুরুতর। ডা. জাহিদ ও বিএনপি নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, আবদুস সালাম আজাদসহ অনেক নেতা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলটি। এদিকে পুলিশ দাবি করেছে, এ ঘটনায় তাদের আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশীদ পাল্টা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির কর্মীরা শুরুতেই পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে আঘাত করলে পুলিশ ‘অ্যাকশনে’ যায়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় তিনি নিজেও পায়ে আঘাত পেয়েছেন বলে জানান।

জানা গেছে, ড. মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য চলাকালে পুলিশ এসে বক্তব্য বন্ধ করতে বললে পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন নেতা-কর্মীর বাকবিত-া হয়। এ সময় নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। আটক করা হয় অন্তত ২৫ জনকে। বিএনপির সমাবেশে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে গত রাতে মশাল মিছিল করেছে দলটি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে রাজধানীর মহাখালী চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বনানী পর্যন্ত এই মিছিল হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা তারিকুল ইসলাম তেনজিং, গোলাম কিবরিয়া, ফারুক আহমেদ, সুমনসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন। 

বিএনপির পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জলকামান ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় জমায়েত হন। সকাল ১০টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে কিছুক্ষণের জন্য পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে ফের সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কর্মীদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শুরু করেন। ৫ মিনিটের মাথায় তাঁকে বক্তব্য বন্ধ করতে বলেই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে কর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতরে নিয়ে যান। কদম ফোয়ারার দিক থেকে পুলিশ একযোগে এসে নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করে। নেতা-কর্মীরাও ইটপাটকেল ছুড়ে মারে পুলিশের দিকে। নেতা-কর্মীরা তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেস ক্লাবের গেট ডিঙিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে পুলিশের হাতে আটক কয়েকজন কর্মীকে ছিনিয়ে নিতে দেখা যায়। এ ছাড়াও ইশরাক আহত কয়েকজন কর্মীকে তার গাড়িতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানই এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। তাঁর খেতাব আপনারা বাতিল করতে চান! এই জিয়াউর রহমান এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। এই জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ‘জেড ফোর্সে’র কমান্ডার ছিলেন। খেতাব বাতিলের ব্যাপারে জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) কোনো এখতিয়ার নেই বলে দাবি করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশটা কোনো ভাষণে স্বাধীন হয় নাই, দেশটা স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে। সেই একাত্তরের যুদ্ধের অপর নাম জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ওরা জিয়ার খেতাব নিয়ে টানাটানি করুক, আর আমরা সবাই মিলে ওদের গদিটা ধরে টান দিই। ওখান থেকে নামিয়ে নিতে পারলে সব হিসাব-নিকাশ এক দিনেই  চুকে যাবে।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ দাবি করেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা করেছে। এতে গুরুতর আহত হন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপি নেতা আমিরুজ্জামান শিমুল, ঢাকা মহানগর উত্তর সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সরদার নুরুজ্জামান, ছাত্রদলের সেলিনা সুলতানা নিশিতা, নাসিমা আক্তার কেয়াসহ শতাধিক নেতা-কর্মী।

এ ছাড়াও যুবদল কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক সরোয়ার ভূঁইয়া রুবেল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ নাঈম, সহসাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নাঈম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জহির মাঝি, আনোয়ার হোসেন এবং হরেন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের এবাদুল বেপারী, নাদিম হোসেন, হিরণ, মো. আজিজ, মো. রুবেল, ইরান, সুমন, রাহাদ, সজিব, আলামিন, জয়, মো. রফিকসহ ২৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা জানান।

সর্বশেষ খবর