শিরোনাম
সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত জয়নুল হক সিকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি

লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের কর্ণধার ও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, সমাজসেবক জয়নুল হক সিকদার। গতকাল দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর রায়েরবাজারে এই শিক্ষানুরাগীর নিজ হাতে গড়া জেড এইচ সিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে সকালে নিজস্ব হেলিকপ্টারযোগে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ জোহর মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। বিশিষ্ট এই সমাজসেবকের মরদেহ ভেদরগঞ্জে পৌঁছলে মানুষের মাঝে কান্নার রোল পড়ে। জানাজা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে মরদেহ ফের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দাফন কাজে জাতীয় সংসদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির         সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম এমপি, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, আসলামুল হক আসলাম এমপিসহ ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, ব্যাংকার, সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার ১০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদার। শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, দুপুরে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর মধুপুর নিজ গ্রামে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তাঁকে চিরবিদায় জানান অশ্রুসিক্ত লাখো মানুষ। উপজেলার জেড এইচ সিকদার ইউনিভার্সিটি মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজার আগে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, জয়নুল হক সিকদারের বড় মেয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য পারভীন হক মরহুমের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান। এ সময় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের মাঝে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।  সেখানে জানাজায় অংশ নেন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান ছাড়াও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম শিল্প উদ্যোক্তা জয়নুল হক সিকদার ১৯৩০ সালের ১২ আগস্ট আসামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। জয়নুল হক সিকদার বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার হিসেবে সমাদৃত। দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, পর্যটন, অর্থনীতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। সিকদার গ্রুপের ব্যবসা বাণিজ্য দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়ও সিকদার পরিবারের সম্পদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, নির্মাণ, হোটেল, পর্যটন, এভিয়েশনসহ বিভিন্ন খাতে গ্রুপটির ব্যবসা রয়েছে। পরিবারটির সবচেয়ে বড় ব্যবসা এখন বিদ্যুৎ খাতের পাওয়ার প্যাক হোল্ডিং। পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে সিকদার গ্রুপের ব্যবসা রয়েছে। জয়নুল হক সিকদার সেই ১৯৪৫ সাল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তাঁর পাশে থেকেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার চার দিন পর অর্থাৎ ১৯ আগস্ট তিনিই প্রথম রায়েরবাজারে কুলখানির আয়োজন করেন। এজন্য সে সময়ের সামরিক বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করে এবং ভয়ভীতি দেখায়, এমনকি তাঁকে জেলও খাটতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়া পর্যন্ত, এই লম্বা সময় জয়নুল হক সিকদার তাঁর প্রিয় ‘মুজিব ভাই’ এর প্রতি ভালোবাসা থেকে খাটে না ঘুমিয়ে ঘরের মেঝেতেই ঘুমাতেন। আগামীকাল কুলখানি : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিল্পপতি জয়নুল হক সিকদারের কুলখানি আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে। রায়েরবাজার জেড এইচ সিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠেয় কুলখানি অনুষ্ঠানে মরহুমের আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাক্সক্ষীসহ সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর