সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই, সবাই খুব আগ্রহভরে টিকা নিচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই, সবাই খুব আগ্রহভরে টিকা নিচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একসময় টিকা দেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও এখন আর কোনো সমস্যা নেই। সবাই আগ্রহ নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসছে। তিনি বলেন, দেশের সবাইকে এর আওতায় আনতে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকেও টিকা সংগ্রহ করবে সরকার।

গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, দানবীর রনদা প্রসাদ সাহার নাতি এবং কুমুদিনী ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, পরিচালক শ্রীমতি সাহা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং এর প্রতিষ্ঠাতা রনদা প্রসাদ সাহার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ মে দানবীর রনদা প্রসাদ এবং তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নারায়ণগঞ্জে তাদের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা আর ফেরেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসাবিজ্ঞান বিশেষ করে ক্যান্সারের ওপর আরও গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে বলেন, দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সঙ্গে ক্যান্সার কীভাবে বিস্তার লাভ করে সেজন্য গবেষণা দরকার। আমাদের দেশে গবেষণার সুযোগ খুবই কম। বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা খুব বেশি একটা হচ্ছে না। যেটা হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘ক্যান্সার এমন একটা রোগ এবং যেভাবে এর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে, সেভাবে ডায়াগনোসিস আমাদের দেশে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর রিসার্চের জন্য অনেকগুলো ইনস্টিটিউট তৈরি করে গিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেগুলোকে উন্নত করার পাশাপাশি আরও নতুন ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। কারণ গবেষণা আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। তিনি বলেন, কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চ’ শীর্ষক এই সেন্টারটা যখন তৈরি হবে তখন এ দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ মানুষ আরও ভালোভাবে পাবে। কারণ দেশের সব মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও গবেষণায় খুব একটা সময় ব্যয় না করে রোগী দেখেই সময় কাটান। তিনি বলেন, ‘আসলে যাদের গবেষণা করার কথা সেসব চিকিৎসক রোগী দেখতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। কাজেই হাতে গোনা খুব কম জনকেই আমি দেখি তাদের পাবলিকেশন্স এবং রিসার্চ।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের সব বিভাগে অন্তত একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে রিসার্চের সুযোগ হবে। তবে আমি মনে করি যে, বেসরকারি খাতকে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, এমনকি শিশুদের জন্য ইনকিউবেটরসহ যা যা প্রয়োজন সেগুলোও আমি সম্পূর্ণ ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছিলাম। যে কারণে আমাদের দেশে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তবে এখানে কুমুদিনী ট্রাস্ট সব সময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ তারা নিয়েছে।

 

সরকারপ্রধান বলেন, কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাত আরও একধাপ এগিয়ে গেল এবং বেসরকারি খাত আরও উৎসাহিত হবে এবং সবাই চাইবে যেন এ ধরনের সেবামূলক কাজ করতে পারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই জাতির পিতা প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ শয্যার একটি করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা জনগণের একদম দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য ছিল।

তিনি বলেন, দেশ যখন স্বাধীনতার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুনভাবে এগিয়ে চলা শুরু করেছে তখনই ঘাতকচক্র ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে সেই অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমে একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস আসার পরই ৭ দিনের মধ্যে আমরা ২ হাজার ডাক্তার, ৬ হাজার নার্স এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও নিয়োগের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য যা যা করা দরকার তাঁর সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই পদক্ষেপের ফলে আজকে করোনাভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ সময় প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহীতা কুমুদিনী হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ভেরোনিকা ডি কস্তাকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বলে দিয়েছি ৪০ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকা পাবেন এবং আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে গেলে তারা ফরম পাবেন এবং রেজিস্ট্রেশনও করতে পারবেন। গতকালও প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন এবং আমরা ৩ কোটি টিকা কিনে রেখেছি। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সবাইকে আমরা টিকা দেব। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়া সত্ত্বেও সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্œ থাকতে হবে। তাহলে আমি মনে করি আমাদের দেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে। তাই সবাইকে এটা মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে সেবা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছে, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন-২০১৬-ও সরকার প্রণয়ন করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর