সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আমার মুখ বন্ধ করতে ওবায়দুল কাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছেন

----- মির্জা কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার (মির্জা কাদের) মুখ বন্ধ রাখতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মির্জা কাদের। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র মির্জা কাদের এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমার মুখ বন্ধ করার জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব ষড়যন্ত্র করছেন, চক্রান্ত করছেন। রাসেল নামে একজন আছে, ঢাকায় ধান্দা করে খায়, তাকে দিয়ে আমাকে ধমক দিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে আমাকে ধমক দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্নভাবে আমাকে ধমক দেওয়া হয়েছে যেন এই সংবাদ সম্মেলন আমি না করি। মির্জা কাদের বলেন, আমি শুনতেছি আওয়ামী লীগের একটা মিটিং হবে। সেদিন আমি দেখব, ওবায়দুল কাদের আমার ভাই নাকি ওবায়দুল কাদেরের ভাই একরামুল করিম চৌধুরী আর নিজাম হাজারী। এটা সেদিন আপনারাও দেখবেন। আমার পরিবার রাজাকার নাকি রাজাকার নয় সেটার প্রমাণও সেদিন আপনারা দেখবেন। না হলে আমারটা আমি চালাব। ওবায়দুল কাদের তার ক্ষমতার জন্য নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে পারেন কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করছি- তারা যদি প্রমাণ করতে পারেন আমার পরিবার রাজাকার তাহলে আমি নিজের বুকে গুলি করে জীবন বিসর্জন দেব। তারপর দেখব আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে ফেনী-নোয়াখালীর অপরাজনীতি থাকবে নাকি থাকবে না- সেটা সেদিন দেখবেন।

নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা এবং পরিবারকে রাজাকার পরিবার বলার প্রতিবাদে ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, ফেনী-নোয়াখালীর অপরাজনীতি বন্ধ, ভোটারবিহীন নির্বাচন বন্ধ, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করছেন বলে জানান তিনি। মির্জা কাদের বলেন, আমরা নাকি রাজাকার পরিবারের সন্তান! ১৯৭১ সালে ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাদের এলাকার মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। আমি আবদুল কাদের মির্জা তখন ছোট ছিলাম, ক্লাস সেভেনের ছাত্র। আমি আমার স্কুল থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম। বেত্রাঘাত করে আমাকে স্কুল ছাড়া করেছিল। আর এখন বলে আমরা নাকি রাজাকার পরিবারের সদস্য! এত বছর এই দলের  পেছনে সময় দিয়েছি। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আজ অনেক কষ্ট লাগে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার পরিবারের কেউ রাজাকার ছিল? আপনারা তদন্ত করে দেখেন। আমাদেরকে রাজাকার পরিবার বলে! সন্ত্রাসী বলা হয়। ওবায়দুল কাদের তার পদ-পদবির জন্য মাথা নত করতে পারে কিন্তু আমি আবদুল কাদের মির্জা একদিনের জন্যও তাকে ছেড়ে দেব না। আমি অস্ত্রবাজি করব না, আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলে যাব। সে তার ছেলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে কিন্তু আমি অস্ত্রের রাজনীতি করি না। নিচে আমার গাড়িগুলো দেখেন কয়েকটা লাঠি হয়তো থাকতে পারে, এর বাইরে কিছু পেলে এর বিচার আপনারা করবেন। তিনি আরও বলেন, অস্ত্র নিয়ে তারা কত মায়ের বুক খালি করেছে। আমি শপথ নেওয়ার জন্য ৬টার সময় যখন বসুরহাট থেকে রওনা করেছি, সোয়া ৬টার দিকে আমার গাড়িতে আক্রমণ করেছিল। নিজাম হাজারীর নির্দেশে দিদারের তত্ত্বাবধানে সোহেল ও সাইফুল নামে দুজন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে আমার গাড়িতে হামলা করা হয়। হঠাৎ করে একটা ট্রাক এসে পড়ে, এটা আল্লাহ পাঠিয়েছিল, পরে আমার গাড়ি ক্রস করে চলে আসে। পরে বহরের অন্য গাড়িগুলোকে আক্রমণ করে। একরাম ভাইকে যেভাবে হত্যা করেছে, আমাকে ও আমার পরিবারকে সেভাবে হত্যা ও উচ্ছেদ করার জন্য নিজাম হাজারী, দিদার, সোহেল এবং এর সঙ্গে একরামুল করিম চৌধুরীরাও ৫০ কোটি টাকা ফান্ড তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের কাছে বিচার চেয়ে পাননি জানিয়ে মির্জা কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আক্রমণ করার বিষয়ে। উনি আমাকে বলেছিলেন যে, দেখতেছি। কিন্তু আজ চারটা দিনে একটা পিঁপড়াও গ্রেফতার হয়নি। সেজন্য আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি।

নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, অনেক কষ্ট, দুঃখ, বেদনা থেকে কথাগুলো বলেছি। আমি কোনো দিন উনার কাছে আসি নাই ১০টা টাকা সহযোগিতা নেওয়ার জন্য। কোনো কাজ পাওয়ার জন্য আসি নাই। ৪৭ বছর উনার সব নির্বাচন, কর্মকান্ড আমি তদারকি করেছি। আজকে আমার ওপর এত অত্যাচার, নির্যাতন। উনি তাদেরকে লালন করেন, ওপরে আল্লাহ আছেন। তাদের দ্বারা আজকে আমি এভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছি। আর আমাকে বলে তুমি চুপ করো। ঠান্ডা থাকো। কিন্তু ঠান্ডা থাকতে থাকতে বারবার এটা হচ্ছে। এ দেশে যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারটা ঠিকমতো হতো তাহলে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে জিয়াউর রহমানকে জীবন দিতে হতো না। বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। এটা রাজনীতিতেও। হত্যা হত্যা ডেকে আনে। তিনি আজকে হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কী জন্য? কারণ, উনি নাকি প্রেসিডেন্ট হতে চান? এটা নিয়ে প্রেসিডেন্ট হবেন? প্রেসিডেন্ট মহামান্য আবদুল হামিদ সাহেব। সব দলের অধীনে নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। হননি? এ রকম জনপ্রতিনিধি আজকে দরকার আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর