মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত ইসি মাহবুব তালুকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত ইসি মাহবুব তালুকদার

দেশের কল্যাণে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, আমি পদত্যাগ করলে যদি দেশের উপকার হয়, তাহলে আমি যে কোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। এ ছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে বলেও মন্তব্য করেন এই নির্বাচন কমিশনার।

গতকাল     আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বর্তমান কমিশনের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে মাহবুব তালুকদার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠের পাশাপাশি সাংবাদিকদের চারটি প্রশ্নের জবাব দেন। দেশের ৪২ জন ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ আপনাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী? এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমাদের কাছে পদত্যাগ দাবি করেছেন কি না জানি না। দাবি যদি করে থাকেন তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করলে যদি লাভ হয়, দেশের যদি কোনো উপকার হয় তাহলে আমি যে কোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমরা একটি প্রসেসের মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশনার হয়েছি। এখন যদি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আমাদের বিষয়ে গঠিত হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আর একটা প্রসেসের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরে আমি পদত্যাগ করে, ফেললাম তা কোনো বিষয় হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে দুই-তিনবার পদত্যাগের অনুরোধ পেয়েছি। এখন কতবার পদত্যাগ করব সেটাও একটা প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, এই সুপারিশ আমাদের ওপর নির্ভর করে না। নির্বাচন কমিশন যারা নিয়োগ করেন বা সংশ্লিষ্ট থাকেন তারা এ সুপারিশ করতে পারেন। এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আজ ৪ বছর পূর্ণ হলো। পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় আমাদের মন আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন। প্রায় সব নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে আমাদের সব দাবি জনগণের উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেবল রাজনৈজিক দল নয়, নীরব জনগোষ্ঠীর অশ্রুত ভাষা শ্রবণের প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে নির্বাচন এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে এই কমিশনার বলেন, এককেন্দ্রিক নির্বাচন বহুদলীয় গণতন্ত্রের উপাদান হতে পারে না। যেহেতু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না, সেহেতু নির্বাচনের প্রতিটি আইনকানুন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে পালনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে পরিপালন ও সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযোগ্য সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে। এই সংস্কার নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমঝোতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমার ধারণা হচ্ছে নির্বাচন নির্বাসনে যেতে চায়। নির্বাচন অর্থ অনেকের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে বাছাই। কিন্তু সে অবস্থা আজকাল পরিলক্ষিত হয় না। প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কি এখন পূর্বে নির্ধারিত? নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য না হলে, কোনো বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র আপন মহিমায় বিকশিত হতে পারে না।

আগামী মে মাস থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে ব্যাপক পরিসরে কয়েক ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনেও সহিংসতার আশঙ্কা করি। আচরণধি লঙ্ঘন ও হানাহানি বর্তমানে নির্বাচনের অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। কোনো অনভিপ্রেত ঘটনাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মিলে একটি অবিচ্ছিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই প্রাণহানির অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার পথ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের উদ্যোগ কেন কার্যকর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যকালের শেষ বর্ষের প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে ‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো’ এই প্রবাদবাক্যটিকে কি আশ্রয় করতে পারি?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর