বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আলজাজিরার প্রতিবেদন অসত্য বানোয়াট মনগড়া ও অনুমাননির্ভর : সেনা সদর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায়, আলজাজিরায় প্রচারিত ‘অল

দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রতিবেদনটি সেনা সদরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তথ্যচিত্র আকারে পরিবেশিত প্রতিবেদনটিতে আলজাজিরা বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনী সম্পর্কে অসংখ্য ভুল তথ্য পরিবেশন করেছে, এর ফলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সেনাবাহিনী প্রধানকে দেশের জনগণ ও বিশ্বদরবারে বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্যান্য অসত্য, বানোয়াট, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও অসমর্থিত তথ্য সংযুক্ত করে এ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্যচিত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার কেনা এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনী প্রধানের ভাইকে সম্পৃক্ত করে কিছু মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউএনডিপিও (UNDPO) কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ‘সিগন্যাল ইউনিটের পরিবর্তে একটি সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোয় (MONUSCO) মোতায়েন করতে সক্ষম কিনা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি উল্লিখিত ইউনিটের প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামাদির তালিকা (Statement of Unit Requirement) জাতিসংঘ কর্তৃক প্রেরণ করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী উক্ত সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জন্য সে সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কিছু সরঞ্জামাদি মজুদ না থাকায় এবং সেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হওয়ায় বাংলাদেশ কর্তৃক সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটটি সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালের পরে প্রেরণ করা সম্ভব বলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে জাতিসংঘকে জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হাঙ্গেরি থেকে ডিসেম্বর, ২০১৭-তে একটি প্যাসিভ সিগন্যাল ইন্টারসেপ্টর কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয় যা জুন, ২০১৮-তে সম্পন্ন হয়। এ সরঞ্জামটি জাতিসংঘের চাহিদা মোতাবেক কেনা হলেও পরে জাতিসংঘ তানজানিয়ার একটি সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোয় মোতায়েন করায় ওই সরঞ্জামটি অদ্যাবধি সেনাবাহিনীর কাছেই অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে এবং ভবিষ্যতে জাতিসংঘের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আলজাজিরা কর্তৃক ওই সিগন্যাল সরঞ্জামটি ইসরায়েলের তৈরি বলে যে তথ্য প্রচার করে তা আদৌ সত্য নয় এবং সরঞ্জামটির কোথাও ইসরায়েলের নাম লেখা নেই। সেনাবাহিনীতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় এবং অনেক পর্যায় অনুসরণ করে সরঞ্জামাদি কেনা হয়। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। এ সিগন্যাল সরঞ্জামটির ক্রয় প্রক্রিয়া বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগেই শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে পূর্বতন সেনাবাহিনী প্রধানের সময়ে সেনা সদরের ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং সরকার থেকে অনুমোদন গ্রহণপূর্বক প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদফতর (ডিজিডিপি) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জুন, ২০১৮-তে চুক্তি সম্পাদন করে। অতএব ওই সিগন্যাল সরঞ্জামটির কেনা নিয়ে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান বা হাঙ্গেরিতে বসবাসকারী তাঁর ভাইয়ের কোনো যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা যে সম্পূর্ণ অসদুদ্দেশ্য-প্রণোদিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু সেনাবাহিনী প্রধানের ভাইয়ের দীর্ঘ সময় ধরে হাঙ্গেরিতে বসবাসের বিষয়টিকে পুঁজি করে এ তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এখানে বলা আবশ্যক, সেনাবাহিনী প্রধানের কোনো ভাই বা আত্মীয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ বা সরঞ্জামাদি সরবরাহ অথবা ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে কখনই সম্পৃক্ত ছিলেন না। এটি সহজেই অনুমেয় যে এ তথ্যচিত্রটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটি স্বনামধন্য ও সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং তাঁর পরিবারের ওপর কালিমা লেপনের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর মতো একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করার অপপ্রয়াস মাত্র। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ সেনাবাহিনী প্রধানের ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয় যেখানে বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অথচ তার আগেই সেনাবাহিনী প্রধানের ভাইয়েরা (আনিস ও হাসান) তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক, পরিকল্পিতভাবে দায়েরকৃত সাজানো ও বানোয়াট মামলা থেকে যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অব্যাহতি পান। ফলে ২৯ মার্চ সেনাবাহিনী প্রধানের ছেলের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে তার কোনো ভাই কোনো দন্ডপ্রাপ্ত বা পলাতক আসামি অবস্থায় ছিলেন না, বরং সম্পূর্ণ অব্যাহতিপ্রাপ্ত হিসেবেই তারা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন এবং ওই সময়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় ছিল না। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান এপ্রিল, ২০১৯-এ সরকারি সফরে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ শেষে ব্যক্তিগত সফরে মালয়েশিয়া গমন করেন এবং বড় ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করেন। অতএব বিষয়টি স্পষ্ট যে প্রতিবেদনে দেখানো সেনাবাহিনী প্রধানের তাঁর প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহ অনুষ্ঠানে এবং মালয়েশিয়ায় সাক্ষাতের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পলাতক আসামির সঙ্গে সাক্ষাৎ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা একটি নির্লজ্জ অপপ্রচার মাত্র। উল্লেখ্য, আলজাজিরার প্রতিবেদনটিতে সামি নামের যে ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তার প্রকৃত নাম সামিউল আহমেদ খান, পিতা লে. কর্নেল (মরহুম) আবদুল বাসিত খান (অব.)। ওই সামিকে ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মিলিটারি পুলিশ কর্তৃক চুরি, সেনাবাহিনীর অফিসারের পোশাক ও ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে প্রতারণার অপরাধে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়। এসব অপরাধের দায়ে ২০০৬ সালে তাকে বাংলাদেশের সব সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। উল্লিখিত সামিউল আহমেদ খান বর্তমানে ‘জুলকার নাইন সায়ের খান’ নাম ধারণ করে এবং তার পিতার নাম ‘কর্নেল ওয়াসিত খান’ ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়ে পলাতক অবস্থায় হাঙ্গেরিতে বসবাস করছেন। এই প্রতারক অর্থলোভী এবং জালিয়াত সামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে রমনা মডেল থানায় গত বছরের ৫ মে একটি মামলা (নম্বর ২/৫/২০২০) দায়ের করা হয়েছে। মূলত, এ প্রতিবেদনটি দেখা যায় বিভিন্ন সময়ের কিছু খ- খ- ছবি বা দৃশ্য সংযোজন করে একটি অনুমাননির্ভর, অগ্রহণযোগ্য ও প্রমাণবিহীন তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি তথ্যচিত্র সম্পাদনার কাজ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান ও তাঁর পরিবারকে সরাসরি মাফিয়া পরিবার হিসেবে উল্লেখ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের সরকার কর্তৃক আইন অনুযায়ী নিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে সাংবাদিকতার রীতি ও নীতি গর্হিতভাবে এরূপ অপবাদ ও মিথ্যাচার চূড়ান্তভাবে অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত এবং আলজাজিরার মতো একটি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে যা আদৌ কাম্য নয়। পেশাগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সেনাবাহিনী প্রধানকে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া আলজাজিরা কর্তৃক অসদুদ্দেশ্য-প্রণোদিত, ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিকভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত করার অপপ্রয়াস যা সেনাবাহিনী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর