বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে

শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ২ লাখ ডলারের স্কলারশিপ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ২ লাখ ডলারের স্কলারশিপ

আবু বকর হানিপ

প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশি একটি বিশ্ববিদালয়ের মালিকানা অর্জন করেছেন। ভার্জিনিয়া স্টেটের ভিয়েনায় অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’ (ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বা আইজিইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিক ‘ম্যাজিকম্যান’ খ্যাত ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মালিকানা অর্জনের মাধ্যমে এ কৃতিত্ব দেখান তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ যুক্তরাষ্ট্রে ‘পিপলএনটেক’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে মার্কিন আইটি সেক্টরে গত দেড় দশকে ৭ হাজারের অধিক প্রবাসীকে উচ্চ বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করেন তিনি। জানা গেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বার্ষিক ২ লাখ ডলারের স্কলারশিপ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে www.igu.edu ওয়েবসাইটে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান, ব্যবসা প্রশাসন ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের কাছে কাক্সিক্ষত একটি শিক্ষাঙ্গন হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত ১১  ফেব্রুয়ারি কাগজপত্রের স্বাক্ষর-অনুস্বাক্ষর এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল মেনে  বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনা সব প্রবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাও বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে অধিক হারে আসতে সক্ষম হবেন এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। জানা গেছে, গত ১২ বছরে ৪ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। এর মধ্যে বিদেশি (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট) শিক্ষার্থীর সংখ্যাই  বেশি। ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা-পর্ষদের প্রধান এবং মালিকানায় আসার পর শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন এনে সব ডিগ্রিধারীকে উপযুক্ত চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত সহায়তা আর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। জানা গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন  টেকনোলজি (এমএসআইটি), মাস্টার অব সায়েন্স ইন সাইবার সিকিউরিটি ও মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ)এ উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া যায়। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যাচেলর অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (বিএসআইটি) ও ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ)। এ ছাড়া কম্পিউটার ও আইটি বিষয়ে বেশ কিছু সার্টিফিকেট-কোর্সও রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হেলথ কেয়ার, নার্সিং, ডাটা সায়েন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়সহ বেশ কয়েকটি কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলেন, বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকার পরও আমি এখানে স্বল্প পারিশ্রমিকের কাজ, অর্থাৎ ‘অডজব’ করেছি। সে সময় আমি অনুভব করেছি, এখানকার বিশ্বিবদ্যালয় ডিগ্রি থাকলে হয়তো আমি উঁচু মানের এবং অনেক বেশি বেতনের চাকরি পাব। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে আমি কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করলাম। সর্বোচ্চ গ্রেড নিয়ে আমি পাস করার পরও সঙ্গে সঙ্গে চাকরি পাইনি। আবার ফিরে গেলাম অডজবে, জীবন চালিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে। কিন্তু থেমে যাইনি। বেশ কিছুদিন পর ঠিকই আইটি জবে ঢুকতে পেরেছি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং সম্পন্ন করে। তখন আমি বুঝলাম, ডিগ্রি দরকার। কিন্তু শুধু ডিগ্রি দিয়েও একজন তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে না এই দেশে, যতক্ষণ না তার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। সে জন্যই আমি ১৫ বছর আগে ‘পিপলএনটেক’ নামক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করি। এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার অভিবাসী এখন উচ্চবেতনে চাকরি করছেন। পিপলএনটেক’র অভিজ্ঞতাই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো। আবু বকর হানিপ আরও জানান, আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষাদান ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য ক্যারিয়ার সহায়তার যে মডেল তৈরি করেছে,  সেটি বাংলাদেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। এজন্য দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তিনি যৌথভাবে পাঠদানে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গেও তার বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করতে আগ্রহী। আবু বকর হানিপ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তিনটি প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে রেমিট্যান্স, গার্মেন্টস ও এগ্রিকালচার। কিন্তু ইনফরমেশন টেকনোলজিও (আইটি) দেশের অর্থনৈতিক চেহারা আরও দ্রুত পাল্টে দিতে সক্ষম। এজন্য বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে সঠিক আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আবু হানিপ বলেন, আইটি  ক্ষেত্রে ভারত যে জায়গাটি দখল করেছে, বাংলাদেশও তা করতে পারে। এজন্য গ্র্যাজুয়েশনের আগেই দরকার হাতে-কলমে শিক্ষাদান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর