শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

খাদ্যে ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাদ্যে ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতিরিক্ত অর্থের লোভে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল বা পচা খাবার বিক্রির মাধ্যমে জনসাধারণের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন। খাদ্যে ভেজাল রোধে সচেতন হতে হবে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে নিরাপদ খাদ্য কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরির পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও পরীক্ষাগার হবে। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘টেকসই উন্নয়ন-সমৃদ্ধ দেশ, নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে এ বছর দেশে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম এতে বক্তব্য দেন। গণভবন প্রান্তে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের সব সময় একটাই লক্ষ্য ছিল- একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। মনে রাখতে হবে, খাদ্যের পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা একান্তভাবে প্রয়োজন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পিতভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গবেষণাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। একসময় দেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানি হতো। কিন্তু সেখানেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো। কেননা সেগুলো যথাযথভাবে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হতো না। এ জন্য খাদ্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা জরুরি। কেননা গবেষণা ছাড়া আসলে কখনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টিনিরাপত্তা অর্জন করতে হলেও গবেষণাটা অত্যন্ত জরুরি। গবেষণার মাধ্যমে যে পরিবর্তন করা সম্ভব তা আমরা প্রমাণ করেছি। আসলে অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক তা তারা চায়নি কখনো। আমদানির ওপরই তাদের আন্তরিকতা ছিল। এর কারণ ছিল, তাদের নিজস্ব কিছু লোক আমদানির মাধ্যমে ব্যবসা করবে। আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে আমরা আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসিনি, জনগণের সেবা দিতে এসেছি, সেবক হিসেবে এসেছি। কেননা নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই আমরা।’ মানুষের সুষম খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে খাদ্য গ্রহণ করলে তা সুষম হবে সে প্রচারটা জরুরি। কেননা একটা সময় দেশের মানুষ শুধু লবণ-মরিচ দিয়েই ভাত খেত। কারণ দারিদ্র্যের কশাঘাতে তারা জর্জরিত ছিল। কিন্তু এখন তো আর সেই অবস্থাটা নেই! এখন যেমন দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে, তেমনি সচেতনতাও এসেছে। মানুষ এখন যা আয় করে সে টাকা দিয়ে সে ভাতের পাশাপাশি একটু আমিষও খেতে পারে। আমি চাই তাদের জীবনমান আরও উন্নত হোক, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাক। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আসুক সেই প্রচেষ্টা যেমন আমরা চালাব, সঙ্গে যারা খাদ্য গ্রহণ করবেন তারা যাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করাটা একান্তভাবে জরুরি।’ এ সময় খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করেন খাদ্যে ভেজাল না দিতে। তিনি বলেন, যারা ব্যবসা করছে তারা দুই পয়সা বেশি কামাই করার জন্য খাদ্যে ভেজাল দিতে থাকে, পচা-গন্ধওয়ালা খাবারগুলোকে আবারও ব্যবহার করে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নিয়ে এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে ঘরে ঘরে অনলাইন থেকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখানেও বেচাকেনা বেড়েছে। কিন্তু সেগুলোর মান ঠিক রয়েছে কি না তাও নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার নিরাপদে পরিবহনের জন্য ডাক বিভাগ বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় রাজধানীতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় গ্রেডিং স্টিকার দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, এ উদ্যোগকে সারা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে খাদ্যের বিভিন্ন বিষয় মনিটর করা যেতে পারে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন খাদ্যমন্ত্রীসহ মঞ্চে উপস্থিত মন্ত্রীরা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর