শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বেসরকারি খাতে চাল আমদানির ধুম

১০ লাখ টনের পারমিট পেয়েছে ৩২০ প্রতিষ্ঠান, এলসি হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার টন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বেসরকারি খাতে চাল আমদানির ধুম

বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিতে ধুম পড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে গত জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পারমিট ইস্যু করেছে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিসিআইই)। এর মধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত ৫ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন চালের এলসি খোলা হয়েছে। আর বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানিকৃত চাল দেশে পৌঁছেছে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, সরকারি এবং বেসরকারি মাধ্যমে অন্তত ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যার মধ্যে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই পরিকল্পনা থেকে শর্ত সাপেক্ষে এ পর্যন্ত ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৩২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩৬টি প্রতিষ্ঠান শর্ত মেনে চাল আমদানির এলসি খুলেছে। যারা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসি খুলতে পারেনি তাদের অনুমোদন বাতিল হয়ে গেছে।

সচিব জানান, ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে চাল আমদানির যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের হিসাব ধরলে সেটি বেড়ে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে বলে ধারণা করেন খাদ্য সচিব। তিনি জানান, শুধু হিলি বন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার ৪৫ ট্রাক চাল এসেছে।

আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জানায়, তারা ৬ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পারমিট দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জানুয়ারি ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন, একই দিন আরও ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন, ৭ ফেব্রুয়ারি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন, ১১ জানুয়ারি ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ১৪ জানুয়ারি ৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ২০ জানুয়ারি ৭২টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন, ৩১ জানুয়ারি ৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৯১ হাজার মেট্রিক টন এবং সর্বশেষ ১১ ফেব্রুয়ারি আরও ৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল শর্ত সাপেক্ষে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট বাসমতি নয় এমন সেদ্ধ চাল শর্ত সাপেক্ষে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, বরাদ্দপত্র ইস্যুর সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে ইমেইলে জানাতে হবে। পরে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এলসি সময়সীমা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বেসরকারি খাতের চাল আমদানির বিষয়গুলো মনিটরিং করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ওই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এলসি খোলার সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেই সময় শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৬টি প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে সমর্থ হয়েছে। বাকি যারা পারেননি তাদের অনুমতি বাতিল হয়ে গেছে। যারা এলসি করেছেন পরবর্তীতে তাদের মধ্য থেকেই চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। গত বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কম হয়েছে। উপরন্তু অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের চালের মজুদ বিপজ্জনকভাবে কমতে থাকে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও বাড়তে থাকে মোটা চালের দাম। এ অবস্থায় গত ২১ ডিসেম্বর জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তত ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি চালানোর জন্য ডিসেম্বর-জুন মেয়াদে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যের প্রয়োজন হবে। অথচ গুদামে ওই সময় পর্যন্ত খাদ্য মজুদ আছে মাত্র সাড়ে ৭ লাখ টন। মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারের কর্মসূচির জন্য চলতি অর্থবছর আরও ১৩ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যের প্রয়োজন পড়বে। পরে চাল আমদানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পাওয়ার পর গত ২৭ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। শুল্ক কমিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির কথাও ওই দিন জানিয়ে দেন খাদ্যমন্ত্রী। এরপর চাল আমদানিতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের ১০ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করার সময়সীমা বেঁধে দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর