শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ভ্যাকসিন গ্রহীতারা

ঝুঁকি বাড়ছে অন্যদের

শামীম আহমেদ

শুরুতে করোনার টিকা নিতে অনেকের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও কোনো নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চোখে না পড়ায় টিকা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে মানুষ। তবে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরই অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। ছেড়ে দিয়েছেন মাস্ক ব্যবহার। হাত ধোয়া বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিও মানছেন না টিকা গ্রহণকারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে টিকা না পাওয়া মানুষের করোনা সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এমনকি ঝুঁকিতে থাকছেন টিকা গ্রহণকারী নিজেও। কারণ, করোনার বিরুদ্ধে সর্বাধিক অ্যান্টিবডি তৈরি হয় টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পর। স্বাস্থ্যবিধি উঠে গেলে ফের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইউজিসি           অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকার প্রযুক্তি পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। তবে এখন পর্যন্ত কোনো টিকা শতভাগ নিরাপত্তা দেবে বলে প্রমাণিত হয়নি। তাই যিনি টিকা নিয়েছেন তাকেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এ ছাড়া টিকা গ্রহণকারী নিজেকে সুরক্ষিত মনে করলেও তিনি ভাইরাস বহন করতে পারেন। তার হাতে, পোশাকে ভাইরাস থাকতে পারে। তার দেহে ভাইরাস প্রবেশ করলে করোনার উপসর্গ দেখা না গেলেও তিনি অন্যদের সংক্রামিত করতে পারেন। ফলে যারা টিকা পাননি তাদের ঝুঁকি বাড়বে।

গত ২৭ জানুয়ারি দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরুর পর অগ্রাধিকার তালিকায় থেকে টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা দেখা গেছে। এমনকি টিকা নিতে গিয়ে মাস্ক খুলে ছবি তুলতে দেখা গেছে অনেককে। প্রতিদিনই এমন অনেকের ছবি যুক্ত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গতকাল রাজধানীর কুড়িলে চায়ের দোকানে বসে টিকা নেওয়ার গল্প বলতে শোনা যায় এক ব্যাংক কর্মচারীর মুখে। তিনি বলছিলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলেছি। এখন আর মাস্কের কী দরকার? দম বন্ধ হয়ে আসে। এত হাত ধোয়ারও দরকার নেই।’ তিনি জানান, টিকা নেওয়ার পর গত এক সপ্তাহ তিনি মাস্ক ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু অফিসের নির্দেশ মানতে অফিসকালীন মাস্ক ব্যবহার করেন। এখন আগের মতোই করমর্দন করেন। আগে পকেটে স্যানিটাইজার রাখলেও এখন রাখেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সব মানুষকে টিকা কর্মসূচির মধ্যে আনা অনেক সময়ের ব্যাপার। দেশে ষোল কোটির বেশি মানুষ। এখন পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৩০ লাখের মতো মানুষ। টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ১৯ লাখ। এখন পর্যন্ত দেশের দেড় শতাংশ মানুষও টিকার আওতায় আসেনি। বিশেষ কিছু ক্যাটাগরি ছাড়া আপাতত ৪০ বছরের কম বয়সীরা টিকা কর্মসূচির বাইরে রয়েছেন। আর ৪০ বছরের নিচেও ৬৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব প্রবীণ ব্যক্তি এখনো টিকা গ্রহণ করেননি। তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার টিকা প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর কিছুটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি আপনাকে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহযোগিতা করবে, শতভাগ সুরক্ষা দেবে না। সংক্রামিত হলে হয়তো হাসপাতালে যেতে হবে না, সাধারণ সর্দি-জ্বর হবে। তবে সেটা তিন সপ্তাহ পর। সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি তৈরি হয় দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিনের মাথায়। তাই টিকা নিয়েই নিজেকে সুরক্ষিত মনে করার সুযোগ নেই। যতদিন ৮০ ভাগ মানুষ টিকার আওতায় না আসে আর করোনা সারা বিশ্বে সাধারণ সর্দি-জ্বরে পরিণত না হয়, ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।

সর্বশেষ খবর