রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিক্ষোভে উত্তাল বরিশাল দিনভর ভোগান্তি

১৭ রুটে বাস ধর্মঘট স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলায় দুই পরিবহন শ্রমিক গ্রেফতারের জেরে ডাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাত জেলার ১৭ রুটে বাস ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সকালে শুরু হওয়া এই ধর্মঘট মালিক-শ্রমিকদের

হয়রানি করা হবে না- পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে দিনভর নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালের আশপাশের ৮টি পয়েন্টে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ সময় রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের সাত জেলার ১৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। ফলে এসব রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী পড়েন চরম দুর্ভোগে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে নগরীর রূপাতলীর দুই পরিবহন শ্রমিককে গত শুক্রবার গভীর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও গ্রেফতার ওই শ্রমিকরা শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তারাও নিন্দা জ্ঞাপন এবং অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন। কিন্তু পুলিশ দুজন নিরীহ পরিবহন শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে। তার প্রেক্ষিতে তারা ধর্মঘট ডাকেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে সন্ধ্যায় ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, পুলিশের আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে ২১ ফেব্রুয়ারির (আজ) পর আবার কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এদিকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় টানা সাত ঘণ্টা অবরোধের পর তিন শর্তে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য (আজ) কোনো কর্মসূচি রাখেননি তারা। নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার, চিহ্নিত অভিযুক্তদের মামলায় আসামি করা এবং শিক্ষার্থীদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আলটিমেটাম শেষ হয়ে যাওয়ায় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল পৌঁনে ৩টার দিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোকতার হোসেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার দাসসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনায় বসেন। সভা শেষে শিক্ষার্থী আলিম সালেহী বলেন, তারা অভিযুক্ত হামলাকারীদের নামের তালিকা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় দুজন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হলেও প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিআরটিসি শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হন। প্রতিবাদে ওইদিন দুপুর ১টায় বাস টার্মিনালে অবরোধ এবং বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে অভিযুক্ত রফিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বিকালে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় রূপাতলী হাউজিংয়ের বিভিন্ন মেসে ঢুকে ২০ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। প্রতিবাদে ঘটনার রাত দেড়টার দিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। টানা ১৭ ঘণ্টা অবরোধের পর বুধবার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে সাময়িক অবরোধ স্থগিত করা হয়। দাবি আদায় না হওয়ায় শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ফের মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলায় শুক্রবার রাতে রনি ও ফিরোজ নামে দুই পরিবহন শ্রমিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। নিরীহ দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে গতকাল সকাল ১০টার দিকে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে অবরোধ এবং বিক্ষোভ করে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাত জেলার ১৭ রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। বিকাল সাড়ে ৫টায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ স্থগিত করলেও অব্যাহত থাকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট। পরে পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটও সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়।

সর্বশেষ খবর