সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আর্থিক চাপ ও খাপ খাওয়াতে না পারা অন্যতম কারণ

-অধ্যাপক জিনাত হুদা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেছেন, করোনাকালে আমরা দেখছি বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী, পেশাজীবী এবং খেটে-খাওয়া মানুষ অর্থনৈতিক চাপের ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা আমাদের বাসাবাড়িতে কাজ করতেন তাদের অনেককেই আমরা কাজে আসতে নিষেধ করেছি। আবার তাদের অনেককেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। শিক্ষিত পেশাজীবীদের অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন। অনেক সাংস্কৃতিককর্মীও এ সময় কাজ করতে পারেননি। অর্থাৎ এ সময় চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ আমাদের ওপর চেপে বসে। এ  অবস্থার সঙ্গে যারা খাপ খাওয়াতে পারেননি তারাই আত্মহত্যার দিকে যান। শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন তিনি।

জিনাত হুদা বলেন, করোনা মহামারী আমাদের জন্য একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। যে অবস্থার সঙ্গে আমরা পূর্বপরিচিত নই। এজন্য আমাদের কোনো পূর্ব প্রস্তুতিও ছিল না। আত্মহত্যাকে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমরা একটি ‘সামাজিক প্রপঞ্চ’ মনে করি। একে কোনো বংশগত জিন বা বংশগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বিচার করি না। আত্মহত্যার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক ধসের সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা দেখেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ আছে। অনেক ছেলেমেয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তারা পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের অনেকে টিউশনি করে। কেউ কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করে। তারাও চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থী যারা নিজেরা ছোটখাটো কাজের মধ্য দিয়ে উপার্জন করে পরিবারকে সহায়তা করত তারা ভীষণ নাজুুক অবস্থায় রয়েছে। এদের মধ্যে একটি শ্রেণি আত্মহত্যার দিকে চলে যাচ্ছে।

জিনাত হুদা আরও বলেন, পরিবারগুলোতেও এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের সন্তানদের নিয়ে ছোট একটি রুমের ভিতর বাস করে। সেখানে মা-বাবা দুজনেই হয়তো কর্মজীবী ছিলেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরুর পর তাদের দুজনেরই কাজ চলে যায়। এদের ওপর ভয়াবহ মানসিক চাপ পড়ে। আবার একটি শিশু দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না। কর্মহীন মানুষগুলো আবার কবে কাজে ফিরতে পারবে তা নিয়ে জটিল এক মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই মানসিক অবস্থা থেকে শুরু হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর এ থেকে আত্মহনন। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর কিশোরী থেকে শুরু করে তরুণী অনেকেরই জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। যে মেয়েটির হয়তো আরও দুই বছর পর বিয়ে হতো তার অভিভাবক এখনই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এই বিষয়টিও এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে। উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণরাও এক ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। মেয়েদের অনেকেই এসব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার দিকে যাচ্ছে। আমরা যে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলাম তা থেকে একেবারে বিপরীত পরিবেশে এখন অবস্থান করছি। তিনি বলেন, মানুষ তখনই আত্মহত্যা করে যখন তার মনের ওপর আর চাপ নিতে পারে না।

সর্বশেষ খবর