সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মানসিক অসুখ বড় কারণ

-বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, সম্প্রতি দেশে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। করোনাকালে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হতাশা। এজন্য দায়ী বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা। এর পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাও দায়ী। তিনি বলেন, মহামারীতে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ কমে আসে। এ ছাড়া এ সময় পারিবারিক সহিংসতাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের মানসিক চাপই মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। মানসিক অসুখ তথা ‘ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার’ আত্মহত্যার গুরুত্বপূর্ণ ও  বড় কারণ। শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. বিধান রঞ্জন বলেন, ক্ষেত্র বিশেষে এ ধরনের মানসিক চাপগুলো বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ বৃদ্ধির জন্যও দায়ী। করোনা পরিস্থিতি আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে যে চাপ তৈরি করেছে তার ফলাফল হিসেবে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই মনোচিকিৎসক বলেন, একজন মানুষ তখনই আত্মহত্যা করেন যখন তার কাছে জীবন অসহায় মনে হয়, জীবন থেকে কোনো সমস্যার সহজ সমাধান খুঁজে পান না। বয়সে যারা তরুণ তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সম্পর্কের টানাপোড়েন কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেন। আবার মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের ¯েœহের সম্পর্ক অনেক সময় অভিমানে গড়ায়। যা থেকেও কম বয়সীরা অনেক সময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ ধরনের আবেগের বিষয়গুলো তাদের আত্মহত্যায় প্ররোচিত না করলেও তাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক বলেন, আগে যৌথ পরিবার ছিল, আবার মানুষজন একটি মহল্লা বা পাড়াকে কেন্দ্র করেই ভাবের আদান প্রদান করত। মানুষে মানুষে সহজেই সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠত। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন সামাজিক যোগাযোগের ভিত মজবুত হয় তেমনি মানুষের মধ্যে আবেগগত সম্পর্কের নেটওয়ার্ক তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পরিবারে শিশুরা একা একাই বেড়ে উঠছে। পরিবারগুলোতে একের অধিক সন্তান না নেওয়ার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরগুলোতে আগের মতো সামাজিক যোগাযোগের ব্যবস্থা আর দেখা যায় না। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখার তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে খেলাধুলাসহ অন্যান্য সৃজনশীল ও বিনোদনমূলক বিষয়গুলো আর সামনে আসে না। তিনি বলেন, শিশুরা শৈশবে বেড়ে ওঠার সময় অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। তাদের সামাজিক সংযোগ দৃঢ় থাকে না। সব মিলিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ একা ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর এগুলো তাদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। এসব কারণে একজন যখন আবেগতাড়িত হয় তিনি নিজেকে আর রক্ষা করতে পারেন না, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর