সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকা নিয়ে চিন্তামুক্ত সরকার

আজ আসবে দ্বিতীয় চালানের ২০ লাখ ডোজ, হাতে আছে ৫০ লাখ ডোজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। সরকারের হাতে এখনো রয়েছে ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ১২৩ ডোজ। আজ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান হিসেবে ২০ লাখ ডোজ আসার কথা রয়েছে। পর্যাপ্ত টিকা হাতে থাকায় গণটিকাদান কর্মসূচি নিয়ে চিন্তামুক্ত রয়েছে সরকার।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী আজ (সোমবার) ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকার দ্বিতীয় চালান দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। টিকা নিয়ে সংকট হবে না। দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাব আমরা।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, শনিবার টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ টিকাগ্রহীতা ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৮০ জন এবং নারী টিকাগ্রহীতা ৮৯ হাজার ২৮৪ জন। রাজধানীতে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ২১৯ জন, নারী ১১ হাজার ৬৯৫ জন। ঢাকা বিভাগে ৬৯ হাজার

৮৫৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ হাজার ৪৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৩ হাজার ৬৩৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ হাজার ২৪৭ জন, রংপুর বিভাগে ২১ হাজার ২৮৪ জন, খুলনা বিভাগে ২৮ হাজার ৩৫৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ হাজার ২৮৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৩ হাজার ৮৫১ জন টিকা নিয়েছেন। গণটিকাদান শুরুর পর এ পর্যন্ত মোট টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৫ জন ও নারী টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ৭ লাখ ৩ হাজার ৯৪২ জন। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বন্ধ ছিল টিকা কর্মসূচি। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করোনার টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ টিকার তিন কোটি ডোজ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি দেশে পৌঁছেছে। এর আগে ২১ জানুয়ারি ২০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড বাংলাদেশকে উপহার পাঠায় ভারত। এই ৭০ লাখ ডোজ টিকা হাতে নিয়ে সরকার দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। সরকারের হাতে এখনো রয়েছে ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ১২৩ ডোজ। আজ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান হিসেবে ২০ লাখ ডোজ আসার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশে সেরামের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং রবিবার হওয়ায় দুই দেশেই সরকারি ছুটি চলছে। আজ (সোমবার) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারব যে টিকা কখন আসছে। তবে এটি নিশ্চিত যে আজকেই দেশে সেরামের করোনার টিকার দ্বিতীয় চালান এসে পৌঁছাবে।’ দেশে প্রতিদিন ২ লাখের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকা দেওয়ার দৈনিক হার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ওপরের দিকে। এ মুহূর্তে দিনে পৌনে ৪ লাখের বেশি টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে সরকারের। চাহিদা অনুযায়ী এ সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তুতিও আছে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১ হাজার ৬টি হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালে একাধিক বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে ২ হাজার ৫৯০টি বুথে প্রতিদিন টিকা দেওয়া হয়। প্রতিটি বুথে দিনে ১৫০ জনকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। প্রতিটি বুথে ছয়জন কর্মী। তাদের দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের মোট সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৪০। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে একসঙ্গে বেশি টিকা এলে ক্রমান্বয়ে বুথের সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বে এ পর্যন্ত ১৫টি দেশ তাদের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। মানুষকে টিকা দিতে উৎসাহিত করতে হবে। ইতিবাচক বিষয়টি বারবার তুলে ধরতে হবে। এখন মানুষ দলে দলে টিকা নিচ্ছে। টিকা নেওয়ার এই গতিটা ধরে রাখতে হবে, মানুষ যেন টিকা নেয়।’

সর্বশেষ খবর