সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হল খোলার দাবিতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

প্রতিদিন ডেস্ক

আবাসিক হল খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : দীর্ঘ ১১ মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ থাকার পর সেগুলো খুলে দেওয়ার দাবি উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা চান তারা। এই দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

জানা গেছে, করোনার কারণে গত বছরের  ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি হল। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর শুরু হয় অনলাইন পাঠ্য কার্যক্রম। তবে, করোনার প্রকোপ কমে আসায় এখন শিক্ষার্থীরা হলে উঠে যেতে চাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে আগামী ১৩ মার্চ থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, শুধু এই দুই বর্ষ নয়, বরং সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দিতে হবে। সশরীরেও চালাতে হবে শিক্ষা কার্যক্রম। হল খোলার দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে। আজ সোমবার রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন ও মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এখনই হল খুলে দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুনাইদ আহমেদ খান বলেন, যেখানে দেশের সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। এখনই যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা না যায়, তাহলে আমরা সব মিলিয়ে দেড় বছরের সেশনজটে পড়ব। তাই এটাই হলো খোলার সঠিক সময়। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত খন্দকার বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের প্রায় ১১ মাস হয়ে গেছে, আমরা আর কীসের জন্য অপেক্ষা করব? প্রশাসন তো এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের বিষয় আছে। সেজন্য দ্রুত স্নাতক শেষ করা প্রয়োজন। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। কেননা, আমাদের আর্থ-সামাজিক কারণে তাদের বিয়ের বিষয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের চাপ আসা শুরু করে। এতদিন ধরে তা মোকাবিলা কঠিন। তিনি বলেন, অনেক দিন পরও যখন একটা অতিমারী যাচ্ছে না, তখন তো আমাদের জীবনযাত্রা থেমে থাকতে পারে না। সবই যখন চলছে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কেন?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর ক্যাম্পাস-সংলগ্ন গেরুয়া গ্রামের স্থানীয় লোকজনের অতর্কিত হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং সম্পূর্ণরূপে হল খোলাসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে জাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত দাবিসমূহ পাঠ করেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের সামিয়া হাসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবিটি প্রশাসন মেনে নিলেও সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি তারা কখন মামলা করবে। ঘটনার বিস্তারিত রেকর্ডসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’ তাদের অন্যান্য দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে গেরুয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তন, আনুষ্ঠানিকভাবে হল খুলে দিয়ে মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা, হামলার সময় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের অস্থিরতার দায়ও প্রশাসনকে গ্রহণের দাবি জানান তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : গতকাল হল খোলার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা এক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। এ সময় নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন মানিক বলেন, ‘আজ আমরা অনতিবিলম্বে আমাদের হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবিতে এখানে এসেছি। আমরা দেখেছি প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যেখানে আছি সেখানেই রয়ে গেলাম। আমাদের নিয়ে ভাবুন না হলে এই জনস্রোত আপনারা থামিয়ে রাখতে পারবেন না।’

পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা নিচ্ছে কিন্তু হল খুলছেন না। তাহলে আমরা কোথায় থেকে পরীক্ষা দেব? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের এলাকায় থেকে পরীক্ষা দিলে কি করোনা ধরবে না? বাইরে থাকার ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।’ ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকি বলেন, ‘আমরা হল ও ক্যাম্পাস খোলার জন্য দীর্ঘ সময় আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু তাঁরা কোনো সাড়া দেননি। তাঁদের তো বেতন বন্ধ নেই। বন্ধ শুধু আমার জীবন, আমার যৌবন। আমরা উপাচার্য স্যারকে জানিয়ে দিতে চাই আমরা আপনার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা অনেক শান্ত; কিন্তু কতটা অশান্ত হতে পারে তা আপনি জানেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে। সে তুলনায় আমরা অনেক ভদ্র। তারা তালা খুলেছে কিন্তু আমরা তালা খুলতে যাইনি। তার মানে এই নয় আমরা তালা খুলতে পারি না। আমরা হল ও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলাম। আগামীকাল (আজ সোমবার) ১১টার মধ্যে কোনো ধরনের ঘোষণা না আসলে আমরাই ঘোষণা দেব।’

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার রাত ১০টায় এ আলটিমেটামের লিখিত কপি ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদারের হাতে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সব আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বাসভবনে প্রবেশের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন ও ফটকে তালা দেন। এ প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় স্নাতকের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা যখনই শুরু হবে এর সাত দিন আগে হল খুলে দেওয়া হবে বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত না মেনে শিক্ষার্থীরা আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হল খুলে দেওয়ার আলটিমেটাম দেন। আলটিমেটাম না মানলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। হল খোলার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন,  শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন যৌক্তিক। তবে এ ব্যাপারে আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : আবাসিক হল খোলার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি পালন করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির বাধার সম্মুখীন হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে মিছিল চালিয়ে যান। পরে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিসমূহ তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমরা চাইলেই হল খোলার ঘোষণা দিতে পারছি না। এ সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। এ সপ্তাহের শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমাদের মিটিং আছে। সেখানে তোমাদের এ যৌক্তিক দাবিগুলো সরকারকে জানাব। এর পরেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চালিয়ে যান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ খবর