বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

চলে গেলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ

দেশের প্রথিতযশা কলামিস্ট, সাংবাদিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সন্ধ্যায় তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানান, তিনি চার দিন ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সৈয়দ আবুল মকসুদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

সৈয়দ আবুল মকসুদের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন। রাত পৌনে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সৈয়দ আবুল মকসুদের দাফন ও জানাজার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। তবে পারিবারিকভাবে জানানো হয়েছে, ভারত থেকে আজ তাঁর মেয়ে দেশে ফিরলে দাফনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সেলাইবিহীন দুই খন্ড সাদা কাপড় পরতেন। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে তিনি ব্যক্তিগত প্রতিবাদ হিসেবে ভিন্নধর্মী এ পোশাক পরা শুরু করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে পোশাকই ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।

সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। পরে সাপ্তাহিক জনতায় কাজ করেন কিছু দিন। স্বাধীনতার পর তিনি সরকারি বার্তাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। আমৃত্যু সত্যাগ্রহী সৈয়দ আবুল মকসুদ গতকাল সকালেও ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ধানমন্ডির বাসা থেকে ভাচুয়ালি অংশ নেন। জনপ্রিয় এই কলামিস্ট তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।

সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান এই লেখক। তাঁর ৪০টির বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন। তাঁর প্রবন্ধের বইয়ের মধ্যে যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা, গান্ধী, নেহরু ও নোয়াখালী, ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু, রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, বাঙালি জাতি বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি ও ধর্মীয় রাজনীতি, রবীন্দ্র রাজনীতি উল্লেখযোগ্য। তিনি অনেক ভ্রমণ কাহিনি লিখেছেন। এর মধ্যে ‘এ জার্নাল অব জার্মানি’ পাঠক সমাদৃত হয়।

শোক : সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম শোক জানিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর ও সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন শোক জানিয়েছেন।

গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, বাংলাদেশের জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। এ ছাড়া নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আমিনা আহমদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইসমাইল হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদুল্লাহ সিকদার, নুরুর রহমান সেলিম, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর