বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আরও সুবিধা পেলেন গার্মেন্ট মালিকরা

প্রণোদনার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি

মানিক মুনতাসির

মহামারী কভিড-১৯-এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের গার্মেন্ট মালিকদের আরেক দফা সুবিধা দিল সরকার। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য সরকার-প্রদত্ত  প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ বিভাগ। ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে আগামী ১ মার্চ থেকে আরও ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ১২ মাস গ্রেস পিরিয়ড ব্যতিরেকে ১৮ মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের শর্ত বহাল রাখা হয়েছে। সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি বলেন, ‘জাতীয় সংসদেও আমি বলেছি ব্যবসায়ীদের আরও ছয় মাস সময় দেওয়া উচিত। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ইতিবাচক, এতে ব্যবসায়ী ও ব্যাংক উভয়ই উপকৃত হবে।’

জানা গেছে, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ২১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ঋণ, নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তা ঘোষণা করে। সরকার দ্রুত এ সময়োপযোগী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী এবং সচল শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পরিশোধের  সময়সীমা পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। ১ হাজার ৯৯২ পোশাক কারখানার ৩৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীকে এ তহবিলের প্রায় পুরো অর্থাৎ ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ তহবিল থেকে ঋণের জন্য উদ্যোক্তাদের মাত্র ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৫৪৯টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। আর বিতরণ বাকি রয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। দেশের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা সুদ প্রদান করবে সাড়ে ৪ শতাংশ আর বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার। পাশাপাশি মাইক্রো ও কুটিরশিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তহবিল থেকে ১০ হাজার ৮২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। বাকি আছে ১৯ হাজার ১৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। দেশের ৭৬টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ পরিশোধ করছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে সুদ দিতে হবে ৪ শতাংশ আর বাকি ৫ শতাংশ সরকার সুদ ভর্তুকি হিসেবে দেবে। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রপ্তানি খাতে সহায়তার জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে (ইডিএফ) ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ তহবিলের আওতায় সুদের হার কমিয়ে ভ্যারিয়েবল রেটের পরিবর্তে গত এপ্রিলে ২ শতাংশ নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে অক্টোবরে তা আরও কমিয়ে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। দেশে ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ প্যাকেজ বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এদিকে রপ্তানি খাতের আরেক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রি-ফাইন্যানসিংয়ের ৫ হাজার কোটি টাকার স্কিম থেকে ৪ হাজার ৮৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকাই বিতরণ সম্ভব হয়নি। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তহবিল থেকে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ কর্মসূচির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো কর্তৃক গৃহীত পুনরর্থায়ন সুবিধার ওপর ৩ শতাংশ হারে সুদ আরোপ হবে। আর এ তহবিল থেকে গ্রাহকপর্যায়ে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সরাসরি সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার-নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ সম্মানী প্রণোদনা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো অর্থ বিতরণ করা হয়নি। তবে জানা গেছে সুবিধাভোগী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সুবিধাভোগী চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শেষ করলেই এ অর্থ দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর