বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

একুশে আগস্ট মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে ইকবাল

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, অবশেষে গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

একুশে আগস্ট মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে ইকবাল

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইকবালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব -বাংলাদেশ প্রতিদিন

২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল হরকাতুল জিহাদের সদস্য ইকবাল হোসেন জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। সেদিন মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল সে। এ মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ইকবাল। ঘটনার পর দীর্ঘ ১৭ বছর ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ছিল সে। অবশেষে সোমবার রাতে রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘৃণিত, কলঙ্কজনক ও বিভীষিকাময় একটি দিন। সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এই মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো র‌্যাবও তৎপরতা অব্যাহত রাখে। গ্রেনেড                 হামলার পর আত্মগোপনে যায় হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া অন্যতম আসামি ইকবাল। সর্বশেষ সোমবার রাতে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড হয় তার। গ্রেফতার ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ডিজি বলেন, ইকবাল ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসে। জঙ্গি প্রশিক্ষণও নেয়। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় আসে ইকবাল। আশ্রয় নেয় গোপন আস্তানায়। সেখানে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমানদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। সে মুফতি হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে ইকবাল জানায়, মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। মুফতি হান্নান হামলা পরিচালনার জন্য তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করে। সে মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল। ঘটনার পর সে ঝিনাইদহে আত্মগোপনে থাকে। ঘটনা পরবর্তী সময়ে র‌্যাব জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতারের জন্য একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৮ সালে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে তার নিজ বাড়িতে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় আত্মগোপনে থাকাকালীন সে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল বলে জানায়। সে ২০০৮ সালে দেশত্যাগ করে মালয়েশিয়া যায়। সেখানে আত্মগোপন থাকাবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। তার বাড়ি ঝিনাইদহে, বাবার নাম আবদুল মজিদ মোল্লা। কিন্তু প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষের দিকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সে দেশে এসে সমমনা জঙ্গিদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করতে থাকে। এ সময় আত্মগোপনে থাকে সে।

গ্রেনেড হামলার মতো একজন আসামি কীভাবে দেশের বাইরে গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবপ্রধান বলেন, ২০০৮ সালে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। সে সময় ইকবাল নিজের নাম পরিবর্তন করে দেশত্যাগ করে। র‌্যাব সদর দফতর সূত্র জানায়, জঙ্গি ইকবাল এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানিয়েছে। ইকবাল ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসেবে অবস্থান করে সে। দেশে ফিরে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আসে। সে ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে (হুজিবি) যোগদান করে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন  শেখ হাসিনাসহ অনেকেই। আদালতে সর্বমোট ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণা হয়। রায়ে অভিযুক্তদের ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে ১১ আসামিকে।

সর্বশেষ খবর