শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে শাহবাগে গতকাল বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্থগিত করা পরীক্ষা পুনরায় চালুর দাবিতে গতকালও শাহবাগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা ১৩ শিক্ষার্থীকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করা রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এদিকে চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের শুরুতে পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশের দাবিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ১ মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। এদিকে  শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক হবে। ১ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে কি না, সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, গত সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে গতকাল শাহবাগে এসে জড়ো হতে থাকেন। কিন্তু কর্মসূচির শুরুর আগেই সকালে ১০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে আন্দোলন করতে চাইলে জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের আটকে দেওয়া হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বলে পুলিশ। তবে আটককৃতদের ছাড়া  যেতে রাজি না হয়ে ছাত্রছাত্রীরা শাহবাগ থানার গেটের পাশে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাক্কাধাক্কি করে রাজু ভাস্কর্যের দিকে সরিয়ে দেয়। এ সময় আরও তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের ‘ভিপি নূরের লোক’ আখ্যা দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে সরিয়ে দিয়েছে, যদিও তারা কোনো দলের হয়ে আসেননি। আশিকুর রহমান নামে অনার্স চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর অনার্স-মাস্টার্সের অল্প কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাকি আছে। এমন পর্যায়ে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। অধিভুক্ত সাত কলেজের চলমান পরীক্ষা নেওয়া গেলে তাদের পরীক্ষা নিতে সমস্যা কোথায়? কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গতকাল আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। রবিবারের মধ্যে এসব শিক্ষার্থীর মুক্তি ও পরীক্ষার স্থগিতাদেশ বাতিল না করলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শাহবাগ অনেক ব্যস্ত একটা জায়গা। অনেক হাসপাতাল রয়েছে এখানে। জনদুর্ভোগ এড়াতে এ রাস্তায় যানচলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে শিক্ষার্থীদের উঠে যেতে বলেছি। তাদের কিছু বলার থাকলে প্রেস ক্লাবে গিয়ে বলবেন। তিনি জানান, রাস্তার শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে ১৩ জনকে আমাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আরও জানান, গতকাল থেকে এসব ছাত্রীর চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি স্থগিত করা হয়েছে। এই পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত-আজিমপুর সড়ক অবরোধ করেন তারা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তিও হয়। ছাত্রীদের দাবি, এতে তাদের কয়েকজন সহপাঠী আহত হয়েছেন। পরে কলেজ ফটকের ভিতরে গিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্রীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ছাত্রী জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার কথা না বলেই হামলা করেছে পুলিশ। কলেজটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসের টিকা দিয়ে ১ মার্চের মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করে তারা। রসায়ন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসাইনের সঞ্চালনায় দর্শন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রিহাজুল ইসলাম রিহান বলেন, শিক্ষা একটি জাতির মস্তিষ্কের খোরাক। এখন শিক্ষাব্যবস্থাকে বন্ধ রেখে জাতিকে বন্ধ্যা করা হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন বসে থাকব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কর্মসূচি আরও দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। অন্যথায়, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, চলমান পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদের সঞ্চালনায় অন্যরা এতে বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, অনেক আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে এসেছেন। হল খোলা না থাকায় নতুন করে বাসা, কটেজ ভাড়া নিতে হয়েছে। এই মুহূর্তে এসে পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে আমাদের চলমান পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, চলমান পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে আগামী রবিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্থগিত হওয়া চলমান পরীক্ষাগুলো পুনরায় চালু করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু হেনা পহিল অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে তারা তাদের কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করেন। এ ছাড়া স্থগিত হওয়া পরীক্ষা চালুর দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল বিক্ষোভ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে রুটিন হওয়া পরীক্ষাগুলো চালুর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘দাবি মোদের একটাই, পরীক্ষা চাই’, ‘শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চাই’, ‘হাট বাজারে মানুষের ঢল, বন্ধ কেন পরীক্ষার হল’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর