রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শাহবাগে বিক্ষোভ অবরোধ

আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা, মুশতাকের মৃত্যু তদন্তে কমিটি । জামিন না হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহবাগে বিক্ষোভ অবরোধ

মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে গতকাল সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্য ও শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আগের দিন শুক্রবার শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল থেকে আটক সাতজনকে এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। গ্রেফতার ওই সাত শিক্ষার্থীকে গতকাল আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন শাহবাগ থানার এসআই শাহীদুল ইসলাম শাহীদ। শুনানি শেষে আগামী তিন কার্যদিবেসের মধ্যে এক দিন তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদেশ দেন বিচারক।

এদিকে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পৃথক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো মশাল মিছিল বের করে। এসব সংগঠনের নেতা-কর্মীর অভিযোগ, মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ এলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। একই সঙ্গে সাতজনকে আটক করা হয়। মশাল মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। দুপুরে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি টিএসসি থেকে বের হয়ে শাহবাগ হয়ে পরীবাগ মোড় ঘুরে আবারও শাহবাগ মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় পল্টন থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি অভিমুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় তামজিদ হায়দার, নজির আমিন চৌধুরী জয়, এ এস এম তানজিমুর রহমান, আকিব আহম্মেদ, আরাফাত সাদ, নাজিফা জান্নাত ও জয়তী চক্রবর্তীকে। এর মধ্যে আরাফাত ছাত্র ফ্রন্টের কর্মী। বাকিরা ছাত্র ইউনিয়নের। গতকাল তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে শাহবাগ থানার এসআই মিন্টু মিয়া অজ্ঞাতনামা আরও দেড় শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক মোর্শেদ আলম মামুন ভূঁইয়ার আদালতে গ্রেফতার সাতজনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। বিচারক তাদের জামিন না দিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মন্টু ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন আইনুন নাহার সিদ্দিকা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, পারভেজসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী। বাদী এসআই মিন্টু মিয়া জানান, মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও গুরুতর আহত করা, ভীতিকর পরিবেশ তৈরি, যান চলাচলে বাধা দেওয়া ও সরকারি মালামাল নষ্ট করার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার তারা সারা দিন তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন। পরে আবার রাতে বিশাল মিছিল নিয়ে এলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের ফিরে যেতে বলেন। এ সময় তারা উগ্র ভাষায় পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের হাতে থাকা মশাল ছুড়ে মারলে এক কনস্টেবলের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটে আগুন ধরে যায়। পরে আন্দোলনকারীরা অতর্কিত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশের ১৫ জন আহত হন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। মিছিলকারীরা মশাল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। নয় মাস আগে গ্রেফতার মুশতাক আহমেদ বন্দী অবস্থায় ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ ঘটনায় লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী এবং ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে জাতীয় জাদুঘর, প্রেস ক্লাব এলাকা এবং শাহবাগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল বের করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মশাল মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৫ জন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সংগঠনটি একটি মিছিল নিয়ে টিএসসি থেকে শাহবাগ হয়ে ফের রাজু ভাস্কর্যে এসে মিলিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, ‘কথা বলা আমাদের অধিকার। আমরা চাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হোক। আপনি আমার কণ্ঠ রোধ করতে চাইছেন। তার মানে আপনি সংবিধান অমান্য করছেন।’ শুক্রবার আটকদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ (শনিবার) সন্ধ্যার মধ্যে আটকদের মুক্তি না দিলে আমরা শাহবাগ থানায় যাব। এর মধ্যে কিছু হলে এর দায় অবশ্যই শাহবাগ থানা পুলিশকেই নিতে হবে।’ এ সময় নিজেদের কর্মসূচি ঘোষণা করে জাহিদ বলেন, মুশতাক হত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে ১ মার্চ সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। ৩ মার্চ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে। ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ক্রমাগত মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তিনি। দুপুরে শাহবাগের সমাবেশে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) আমাদের শান্তিপূর্ণ মশাল মিছিলে পুলিশের হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হয়েছেন। আমাদের সাতজন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। আমরা অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি। তাদের মুক্তি না দেওয়া হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।’ পরে শাহবাগ থানার সামনের রাস্তা দিয়ে মিছিল করে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যান আন্দোলনকারীরা।

খাটিয়া মিছিল : ‘দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। বাকস্বাধীনতা আজ বাকশোবন্দী। দেশের প্রাণপাখি যেন উড়ে গেছে।’ এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করে গতকাল বিকালে ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে ‘প্রতীকী খাটিয়া মিছিল’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মিছিল রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ পেরিয়ে বাংলামোটরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে আবারও শাহবাগ হয়ে রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসেন। কর্মসূচির সংগঠক লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট আবু মুস্তাফিজ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এ প্রতিবাদ করলাম। কেননা আমাদের মধ্যে দীনতা আছে। আমরা প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে মারা যাচ্ছি। সে ভয় ভেঙে আমরা আজকে মিছিল করলাম। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের যে ভয়ের সংস্কৃতি আছে, সেই ট্যাবু আমরা ভেঙে দিতে চাই। আমরা সব অন্যায়, অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, গ্রেফতার, গুম, খুনের প্রতিবাদ করছি। আমাদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য খুলনার শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন ঢাকা আসতে চাইলে তাকে ডিবি তুলে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। দেশে এখন এমন খারাপ অবস্থা চলছে।’

নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি খেলাফত মজলিসের : কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে খেলাফত মজলিস। সংগঠনের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে জনগণের নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। সরকার ও সরকারদলীয় লোকদের লুটপাট, দুর্নীতি, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের কারণে বহু নাগরিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সর্বশেষ শিকার কারাগারে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা লেখক মুশতাক আহমেদ। বিবৃতিতে তারা নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি : গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণকান্তি শিকদারকে এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম, ময়মনসিংহের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির, গাজীপুর জেলা কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. কামরুন নাহার। এ ছাড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আরিফ আহমদ কমিটিতে সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

মুশতাকের জামিন না হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ : কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, একই মামলায় অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেলেও ছয়বার আবেদন করা সত্ত্বেও মুশতাক আহমেদের জামিন না হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। এর মাধ্যমে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। কারাবন্দী লেখকের মৃত্যুর ঘটনার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। একই সঙ্গে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সরকার সমালোচনা সইবার সৎসাহসের পরিচয় দেবে বলে আশা করি। গতকাল টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করে তথাকথিত প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাতে ভিন্নমত দমনের মোক্ষম হাতিয়ার তুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুশতাকের মৃত্যুই প্রমাণ করে যে, সরকার তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের সমালোচনা সইবার মতো সৎসাহস নেই। সরকারের সমালোচনা করা নাগরিকের অধিকার, তথা মতপ্রকাশের অধিকার কোনো সভ্য সমাজে অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে না। গণতন্ত্র ও সংবিধানের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও ব্যক্তিকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনতেই হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. জামান বলেন, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৪৫৭ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে ১৯৭টি মামলা হয়েছে, যেখানে ৪১টি মামলায় ৭৫ জন পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আইনের করা মামলার অধিকাংশেরই বাদী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নয়তো ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি যে বিরোধী মত ও সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতেই কার্যত ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বলাটা অত্ত্যুক্তি হবে না। একইভাবে আইনটি বহাল রেখে দেশে বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা অব্যাহত রয়েছে- এমন দাবি অবান্তর। অবিলম্বে এই বিতর্কিত আইনটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, সমালোচক মাত্রই শত্রু নয়; সমালোচক শুভাকাক্সক্ষীও হতে পারেন। সরকারের দুর্নীতি এবং অনৈতিক ও অন্যায় কাজের সমালোচনা করতে ব্যক্তি যে বাকস্বাধীনতার চর্চা করেন, তা কোনো অর্থেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে না।

রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষার নামে মুশতাক আহমেদকে দিনের পর দিন জেলখানায় আটকে রাখা এবং রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যুকে সরকার আর আট-দশটি ঘটনার মতোই বিবেচনা করছে। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ব্যক্তিবিশেষ দূরভিসন্ধিমূলকভাবে অপব্যবহার করছে কি না-  সে প্রশ্নের জবাব আশা করা প্রায় অলীক। তবে এমন মর্মান্তিক ঘটনার কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিতে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর