রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
খুলনার সমাবেশে বিএনপি

আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার আদায় করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার আদায় করতে হবে

খুলনায় কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হতে পারে না। সরকারের দলদাস এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেও গ্রহণযোগ্য ভোট হতে পারে না। এখন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। গতকাল বিকালে খুলনায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশে বিএনপি নেতারা এ মন্তব্য করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। তবে সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শক্ত অবস্থান নেয় পুলিশ। সড়কের প্রবেশ মুখে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে নেতা-কর্মীদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৮টি রুটে বাস চলাচল ও গতকাল সকাল থেকে খুলনার সঙ্গে নদীপথে নৌকা-ট্রলার পারাপার বন্ধ করা হয়। সমাবেশ শেষে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আবার যানবাহন ও নৌ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। 

খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী সিটি মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা  দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।

সমাবেশে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম বলেন, চুপ থাকলে কখনো দাবি আদায় হয় না। আন্দোলন- সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের দাবি আমাদের পাওনা আদায় করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কঠোর আন্দোলন করতে হবে। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, পাটকল চিনিকল বন্ধ করা হয়েছে। পথে পথে শ্রমিক-কর্মচারীরা না খেয়ে আছে। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতার নামে ৫ হাজার একর জমি হয়েছে, ব্যাংক লুট করা হয়েছে, টাকা পাচার হচ্ছে। এসব কথা বলা যাবে না, লেখা যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, খুলনায় শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতির মডেল সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কারণে আমরা ‘ভোট ডাকাতির বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ এই স্লোগান দিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। অর্থবহ নির্বাচন চাই, নির্বাচন কমিশন বাতিল চাই। শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। কথা বলার অধিকার নেই। পুলিশ সমাবেশে আসার পথে পথে বাধা দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমরা রাতের ভোট চাই না। সব নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করায় তিনি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, সমাবেশে আসার সময় পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। খুলনার নেতা-কর্মীদেরও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তার পরও বাধা উপেক্ষা করে বিভাগীয় সমাবেশ গণজোয়ারে পরিণত হয়েছে। বাধা দিয়ে কখনো গণজোয়ার ঠেকানো যাবে না।

ইশরাক হোসেন বলেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা গুম হয়েছে, দেশে একের পর এক ধর্ষণ হয়েছে কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। তাই এ সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সমাবেশে আসতে বাধার অভিযোগ : ব্যাপক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে খুলনায় বিএনপির সমাবেশ শেষ হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে সারা শহরে পুলিশের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপি কার্যালয়, হাদিস পার্ক, পিকচার প্যালেস মোড়, শিববাড়ি মোড়, জেলা পরিষদ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে দুপুরের পর থেকে যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়। এ সময় অনেককে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে খুলনার সঙ্গে ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। একইভাবে গতকাল সকাল থেকে খুলনার সঙ্গে নদী পারাপার ঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা থেকে কোনো মানুষ নৌকা বা ট্রলারে করে খুলনা শহরে প্রবেশ বা বের হতে পারেনি। নদীঘাটগুলোতে আড়াআড়ি বাঁশ দিয়ে চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এসব জায়গায়ও পুলিশকে নজরদারি করতে দেখা যায়। অনেকে চিকিৎসা বা চাকরির কারণে খুলনা শহরে এসে ফিরে যেতে পারেননি। ঘাট এলাকায় অসুস্থ মানুষকে হতাশা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা গেছে।

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, সমাবেশ ঘিরে বাগেরহাট জেলা থেকে খুলনায় বাসসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনা বাস মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটের যাত্রীসাধারণ। যাত্রীরা বলছেন, বাসচলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রোগী নিয়েও ভোগান্তিতে পড়েন স্বজনরা। এদিকে বাসচলাচল বন্ধ থাকায় মাহেন্দ্র, অটো ও টমটম চালকরা বাগেরহাট জেলার মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাগেরহাট পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি তালুকদার আবদুল বাকী জানান, আমরা বাগেরহাটে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলো কোনো পরিবহন ধর্মঘট ডাকেনি। খুলনা থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে খুলনায় পরিবহন নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাগেরহাটে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর করণীয় কিছু নেই।

সর্বশেষ খবর