মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বীমা সেবায় গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বীমা মূলত একটি সেবামূলক পেশা, বীমা সেবাকে জনপ্রিয় করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোকে সেবা দিতে হবে। গতকাল সকালে জাতীয় বীমা দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বীমার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের একটি বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। ব্যবসা করতে গিয়ে তারা বীমা করছেন কিন্তু অনেক সময় কোনো ক্ষতি না হলেও নিজেরা, আমি বলব যে আর্টিফিশিয়ালি কিছু ক্ষতি করে- যেমন কোথাও আগুন লাগালো বা কোথাও একটা ঘটনা ঘটালো, এটা করে একটা মোটা অঙ্কের বীমার প্রিমিয়াম থেকে টাকা চায়। আসলে যদি খোঁজ করে দেখা যায়, যে পরিমাণ অর্থ দাবি করছে, সেই পরিমাণ খরচ হয়নি। কিন্তু যারা পরীক্ষা করতে যাবে, তাদেরও আপনাদের ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। তারা যেন আবার অন্য কোনোভাবে অল্প ক্ষতিকে বড় ক্ষতি হিসেবে না দেখায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কয়েকটি বিষয় আমি হাতেনাতে ধরতে পেরেছি বলে আপনাদের সামনে বললাম। কাজেই এখানেও যে দুর্নীতিটা হয়, সেটাও কিন্তু দেখতে হবে। এখন অনেক কমে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। সেই বিষয়টাও আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হবে, বিস্তৃত হবে, মানুষ সচেতন হবে, বীমার গুরুত্বটাও ততটা বাড়বে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বীমা থেকে যে সুফলটা পেতে পারে মানুষ এই সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমি আশা করি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আপনারা যারা বীমার সঙ্গে জড়িত, তারা উদ্যোগ নেবেন। বীমা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই ১ মার্চকে বীমা দিবস হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্তের জন্য। ১৯৫৯ সালের এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বীমা শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতেই গঠিত হয় ইন্স্যুরেন্স একাডেমি। বীমা শিল্পের প্রসারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্যই তিনি এ একাডেমি গঠন করেন, যা আমাদের দেশে বীমা শিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য এখনো কার্যকর রয়েছে। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পান। শূন্য থেকে তিনি শুরু করেন। একটি রাষ্ট্র গঠনে যা যা প্রয়োজনীয়, তিনি করে গিয়েছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি তিনি তৈরি করে দিয়ে যান এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিও বাংলাদেশ শুরু করে। দেশের মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা ফিরে আসে, মানুষ যখন যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠে, ঠিক সেই সময়ে আসে চরম আঘাত- ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। বীমা শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা ১৯৩৮ সালের পুরনো বীমা আইন রহিত করে ২০১০ সালে সময়োপযোগী নতুন আইন করি। তৎকালীন বীমা অধিদফতর করে বিলুপ্ত করে বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়, যাতে এটা আরও শক্তিশালী হয়। জাতীয় বীমা নীতি ২০১৪ আমরা প্রণয়ন করি এবং তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বিদেশি কর্মী বীমা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি মোকাবিলায় হাওর এলাকা, উপকূলভিত্তিক এলাকায় আমরা আবহাওয়াভিত্তিক শস্য বীমা চালু করেছি। তবে আমাদের স্বাস্থ্য বীমাটা আরও ব্যাপকভাবে চালু করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমাদের দেশের মানুষ ততটা সচেতন না। তবে এ করোনাভাইরাসের পর মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতাটা সৃষ্টি হবে।

 আমরা চাই, বীমা সম্পর্কে মানুষ আরও আস্থাশীল হোক, এ জন্য বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, তা আরও কার্যকর করা দরকার, যাতে বীমার পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং এটা মানুষের একটা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তিনি বলেন, আমাদের যেটা অভাব, আমাদের কোনো অ্যাকচুয়ারি নেই। এটাকে আমরা শক্তিশালী করার জন্য লন্ডন থেকে অ্যাকচুয়ারি নিয়ে এসেছিলাম। আসলে আমাদের যারা এ ব্যাপারে লেখাপড়া করে, তারা লেখাপড়া শেষে বিদেশে চাকরি পেয়ে যায়, আর দেশের কথা ভুলে যায়। বীমাকে আরও শক্তিশালী করতে হলে অ্যাকচুয়ারি প্রয়োজন।

 সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অ্যাকচুয়ারি সম্পর্কে যারা শিক্ষা নেবে, প্রশিক্ষণ নেবে, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সে ব্যবস্থা নেব। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাঠানো হবে। আমি জানি, ওখানে যদি তারা শিক্ষা নেয়, বড় চাকরি পেয়ে যাবে। কিন্তু এখানে তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে যে দেশে ফিরে এসে দেশের জন্য কাজ করবে। তাদের শিক্ষার টাকাটা আমরাই দেব। এ সিদ্ধান্তটা আমরা নিয়েছি, এরই মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী আমরা সুনির্দিষ্ট করেছি। তারা শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে এসে বীমার জন্য কাজ করবে। অনুষ্ঠানে বীমা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই চার বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন এবং চার ছাত্রের মাঝে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমাও বিতরণ করেন। মোট ৫০ হাজার ছাত্রকে এই বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি নিজে গিয়ে সম্মাননা দিতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু করোনা আমাকে একরকম বন্দী করে দিয়েছে। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমরা টিকা নিয়ে এসেছি, দেওয়াও হচ্ছে। টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, এগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর