বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

র‌্যাপিড ক্র্যাশ প্রোগ্রাম জরুরি

------ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার

র‌্যাপিড ক্র্যাশ প্রোগ্রাম জরুরি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, গত মাসেই বলেছিলাম, মশার ঘনত্ব চারগুণ বেড়েছে। এখনই সমন্বিত র‌্যাপিড ক্র্যাশ প্রোগ্রাম না নিলে চলতি মাসে এই ঘনত্ব বেড়ে যেতে পারে। শীতের পরের তাপমাত্রা মশা জন্ম নেওয়ার সবচেয়ে উপযোগী পরিবেশে থাকে। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তাই এখন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল তিনি টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি মাসে রাজধানীর ছয়টি এলাকাকে নমুনা ধরে সেখানকার ঘনত্ব থেকে ডিজিজ প্রেডিকশন এবং মসকুইটো প্রেডিকশন করি আমরা। নমুনা এলাকাগুলো হলো- যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া, শাঁখারীবাজার, মোহাম্মদপুর-শ্যামলী, পরীবাগ-সেন্ট্রাল রোড-শাহবাগ, উত্তরা এবং খিলগাঁও-বাসাবো।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আমরা এই গবেষণা শুরু  করি। বছরের অন্য সময়ে আমরা এখানে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি মশা পাই, যেটি এখন গড়ে ৫০টিরও ওপরে। অর্থাৎ অন্যান্য মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে মশার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় চার গুণ। জানুয়ারিতে এই ঘনত্ব ছিল দ্বিগুণ। এখনই র‌্যাপিড ক্রাশ প্রোগ্রাম না নিলে চলতি মাসে এই ঘনত্ব ৫০ থেকে বেড়ে ৬০-এ চলে যেতে পারে। এখন যে মশাগুলো দেখা যায় তার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই কিউলেক্স মশা। কিউলেক্স মশা দিনে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে তারা সক্রিয় হয়ে সারা রাত থাকে। এই মশাটি সারা বছরই থাকে, তবে শীতে বেড়ে যায়। আর এডিস মশা বাড়ে বর্ষায়। অন্যদিকে বৃষ্টি যত বাড়ে, কিউলেক্স মশা তত কমে।

কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে নর্দমা ও ডোবার পচা পানিতে হয়। এ সময় পানি স্থবির হয়ে যায় এবং পানিতে অর্গানিক উপাদান পচে মশার লার্ভার খাবার তৈরি হয়। শীতের শেষে এই তাপমাত্রা মশার বংশবিস্তারের সবচেয়ে উপযোগী সময়। নর্দমা ও ডোবা পরিষ্কার এবং মশা নিয়ন্ত্রণের পুরো দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নর্দমা ও ডোবার পানি চলমান করে দিতে হবে। এ সময় রাজধানীতে খুব বেশি জায়গায় স্থবির পানি নেই, কিন্তু যেখানে আছে সেখানে কোটি কোটি মশা জন্মেছে। এলাকার কাউন্সিলররা অবশ্যই জানেন কোথায় স্থবির পানি রয়েছে। সে জায়গাগুলো খুঁজে বের করে লার্ভা নিধনে লার্ভিসাইডিং দিতে হবে আর উড়ন্ত মশার জন্য এডাল্টিসাইটিং দিতে হবে। মশক নিধনে ওষুধ ব্যবহারের বিষয়ে অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, যদি ওষুধ ছিটানোর সময় এবং পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়, তাহলে যে কীটনাশক আছে সেটি দিয়েই মশা মরার কথা। প্রতিটি কীটনাশকেরই একটি কার্যকাল রয়েছে। কতটুকু পানিতে কতটুকু কীটনাশক দিতে হবে, সেটিরও একটি পরিমাণ আছে। একবার যেখানে কীটনাশক দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যেই সেখানে ওষুধ দিতে হবে। পরিমাণ এবং সময়ের ব্যবধান সঠিকভাবে মানলে সেটি কাজ করবেই। সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। তাহলে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। 

সর্বশেষ খবর