বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
বা হা স

ইসিকে অপদস্থ করতে সবকিছু করছেন মাহবুব : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসিকে অপদস্থ করতে সবকিছু করছেন মাহবুব : সিইসি

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে হেয়, অপদস্থ ও নিচে নামানোর জন্য যা করা দরকার মাহবুব তালুকদার সবই করে চলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ব্যক্তিগত স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কমিশনকে হেয় করছেন।

গতকাল নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সিইসি এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে সিইসি যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, মাহবুব তালুকদারসহ চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক তখন মঞ্চে বসা। এ সময় মিলনায়তনে মিডিয়া কর্মীরা এবং নির্বাচন কমিশনের কয়েক শত কর্তকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সবার শেষে বক্তব্য দিতে উঠে সিইসি যখন মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন এই নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যরা পড়েন অস্বস্তিতে। তবে তিনি মঞ্চ ছেড়ে যাননি।

সিইসির ঠিক আগেই এ অনুষ্ঠানে নিজের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মাহবুব তালুকদার। সেখানে তিনি দেশের নির্বাচন পরিস্থিতি এবং কমিশনের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। ‘আমার বক্তব্য’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এক কেন্দ্রিক স্থানীয় নির্বাচনের তেমন গুরুত্ব নেই। নির্বাচনে মনোনয়ন লাভই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় নির্বাচনেও হানাহানি, মারামারি, কেন্দ্র দখল, ইভিএম ভাঙচুর ইত্যাদি মিলে এখন অনিয়মের মডেল তৈরি হয়েছে।’ ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার না হলে এখন যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, তার মান আরও নিম্নগামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ ইসি মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্য নিয়ে সিইসি ক্ষোভ ঝাড়লেন প্রকাশ্যে। এর আগেও সিইসি মাহবুব তালুকদারের নানা বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার সাহেব অভ্যাসগতভাবে সারাজীবন আমাদের এ নির্বাচনে যোগ দেওয়ার পরদিন থেকে যা কিছু ইসির নেগেটিভ দিক, তা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পাঠ করতেন। আজকে এর ব্যতিক্রম হয়নি।’  ভোটার দিবস উপলক্ষেও মাহবুব তালুকদার ‘একটি রাজনৈতিক বক্তব্য’ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন সিইসি।

তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে তিনি (মাহবুব তালুকদার) কাজ করেন না; ব্যক্তি স্বার্থে ও একটা উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য এ কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য যতটুকু যা করা দরকার, যখন যতটুকু করা দরকার, ততটুকু করেছেন উনি। ক্ষোভের সঙ্গে সিইসি বলেন, এ নির্বাচন কমিশনে যোগ দেওয়ার পর যতগুলো সভা হয়েছে, সব সময় মাহবুব তালুকদার ‘একই আচরণ’ করে আসছেন। ‘ভেবেছিলাম ভোটার দিবস হিসেবে তিনি কিছু বলবেন; কিন্তু তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলেন। ইসিকে কতখানি হেয় করা যায়, কতখানি নিচে নামানো যায়, অপদস্ত করা যায় তা তিনি করে চলেছেন।’ সিইসির অভিযোগ ও বিস্ফোরক মন্তব্যের বিষয়ে অনুষ্ঠানের পর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

তিনি বই লেখার রসদ খোঁজেন : যেসব নির্বাচনে ভোটের হার বেশি ছিল, সেগুলো মাহবুব তালুকদার তার বক্তব্যে উল্লেখ না করায় পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি অভিযোগ করেন, ‘নিজের বই লেখার প্রস্তুতির জন্যই’ কমিশনের নানা নেতিবাচক তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থাপন করে থাকেন নির্বাচন কমিশনার তালুকদার। আর তা করতে গিয়ে তিনি ‘ভুল তথ্যও উপস্থাপন’ করেন মন্তব্য করে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘ইভিএমে যে ৮৫ ভাগ ভোট পড়েছে, তা তিনি (মাহবুব তালুকদার) দেখেননি। যেখানে ৬০ ভাগ, ৭০ ভাগ ভোট পড়েছে, তাও তিনি দেখেননি। তা কোনোদিনও তিনি বলবেন না।’ সিইসি হুদা বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে স্বাধীনভাবে মাহবুব তালুকদার কাজ করতেই পারেন। আর মেয়াদের শেষ বছরে এসেও মাহবুব তালুকদার নিজেকে বদলাবেন বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেছেন, বলবেন; আর একটা বছর আছে, তা তিনি বলতে থাকবেন, ধরে নিই।... নির্বাচন কমিশনের যেখানে যতটুকু ভুলত্রুটি, একটা পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটেঘুঁটে কোথাও থেকে, ডাস্টবিন থেকে একটা, ওখান থেকে একটা জোড়াতালি দিয়ে ভুলত্রুটি বের করে সম্ভব। ‘‘ইসিতে তার কী দায়িত্ব, এটা কতটুকু, কী পরামর্শ দিয়েছেন, কাজ করেছেন, সেগুলো করেন কি না। তা না করে ‘এটা করা যায়নি’, ‘এটা করলে ভালো হতো’, ‘কর্মকর্তারা কাজ কী করছেন’, ‘এগুলো করেন কি না’, এসব প্রশ্ন করা যায়।” সিইসি বলেন, ‘উনি কথা বলার পরদিন গণমাধ্যমে কেমন কভারেজ পেল, কাটিং সংগ্রহ করবেন, ইসির পাঁচ বছর হবে, ভালো লিখতে পারেন,... উনি বই লিখবেন, এ জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।”

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ভোটার তালিকার শুরু হচ্ছে একটি কারণে। যাতে করে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায়। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের শাসনভার কোন একটি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ জন্য এই ভোটার তালিকার সূত্রপাত। গণতন্ত্রের প্রথম স্টেপ হচ্ছে ভোটার তালিকা। ভোটার তালিকা যদি নির্ভুল না হয়, তবে গণতন্ত্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। ভোটার তালিকা নিয়ে বাংলাদেশ যেমন বিশ্বের বুকে গর্ব করে, সেই গর্ব অটুট থাকুক। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম প্রশ্ন রেখেছেন, কোথাও কি সুষ্ঠু ভোট নেই? তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু ভোট হওয়ার বিষয়টিও স্বীকৃতিতে আসা উচিত। যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের সবাইকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার আহ্বান জানান কবিতা খানম। তিনি ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া তরুণদের ভোটার হয়ে স্বাধীন মতামত দিয়ে সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন অপরিহার্য। ভোটার যোগ্য প্রতিটি নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাটা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ভবিষ্যৎ ভোটারদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভোটার হতে এগিয়ে আসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর ও আইডিইএ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের।

পদক পেলেন তিন কর্মকর্তা : নির্বাচনী পদক পেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের তিনজন কর্মকর্তা। ‘জাতীয় নির্বাচনী পদক-২০২১’ বিজয়ীরা হলেন খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. ইউনুস আলী, বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. আলাউদ্দীন ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম। গতকাল জাতীয় ভোটার দিবসে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর