বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সরকারি চিকিৎসকের বেসরকারিতে বাণিজ্য

মাহবুব মমতাজী

করোনার অজুহাত দিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগী দেখেন না। কিন্তু দুপুরের পর তার নিজস্ব মালিকানাধীন রিলায়েন্স ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন লিমিটেডে ঠিকই নিয়মিত রোগী দেখছেন। এই চিকিৎসক হলেন ডা. শাহরিয়ার হোসেন খান। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদেও আছেন। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স করেছেন তার ভাই জোবায়ের হোসেনের নামে।

গতকাল ঢামেক হাসপাতালের কিডনি ইউনিট, বার্ন ইউনিট এবং রিলায়েন্স            ডায়াগনস্টিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, কিডনি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহরিয়ার হোসেন খানের কাছে রোগী দেখাতে রাজধানীর রামপুরা থেকে আসেন আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি। সেখানে হাসান নামে এক অফিস সহকারী ওই ব্যক্তিকে বললেন, ‘স্যার (ডা. শাহরিয়ার) করোনা ইউনিটে ডিউটি করেন, তাই এখানে রোগী দেখেন না। আর তিনি ডিউটির ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে থাকার পর রোগী দেখেন।’ হাসান মিনিট পাঁচেক পর আবুল কাশেমকে জানালেন, তিনি চাইলে হাসপাতালের বিপরীতে রাস্তার ওপারে থাকা রিলায়েন্স ডায়াগনস্টিকে গিয়ে ডা. শাহরিয়ারকে দেখাতে পারবেন। এর জন্য সেখানে আলাদা ভিজিট দিতে হবে। হাসান আরও বলেন, ‘যারাই স্যারের (ডা. শাহরিয়ার) কাছে রোগী দেখাতে আসেন, আমি তাদের সবাইকে রিলায়েন্সে গিয়ে দিয়ে আসি।’ ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের বিপরীতে হোসেনী দালান রোডের ৭৯/১/ক নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় রিলায়েন্স ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন লিমিটেড। সেখানকার রিসিপশনে থাকা সাখাওয়াত নামে একজন জানান, ডা. শাহরিয়ার প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সেখানে রোগী দেখা শুরু করেন। ঢামেক বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত করোনা ডায়ালাইসিস ইউনিটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিউটি করেন ডা. শাহরিয়ার। কয়েকজন রোগী এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করেন, তার কাছে ডায়ালাইসিস করতে এলে প্রতিবারই এসআর, প্রস্রাবের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা বা সাধারণ এক্স-রে করতে তার মালিকানাধীন নামসর্বস্ব রিলায়েন্সে পাঠান। অযথা হাজার হাজার টাকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বাধ্য করেন। কিডনি ডায়ালাইসিস করতে আসা নিরীহ রোগীদের তার আমদানি করা ক্যাথেটার ২ হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করেন। অথচ অন্যখানে এই ক্যাথেটার মাত্র ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়।  এসব বিষয়ে জানতে ডা. শাহরিয়ার হোসেন খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, করোনা ইউনিটে ডিউটির পর কোয়ারেনটাইনে থাকার কথা। এরপর অন্য কোথাও রোগী দেখার কথা নয়। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবাধিকারকর্মী মো. নুর খান লিটন বলেন, এটা যেমন নৈতিকতার স্খলন, তেমনি অন্য রোগীদের চরম ঝুঁকিতে ফেলছেন ওই চিকিৎসক। অভিযোগ পাওয়া যায়, ঢামেক হাসপাতাল দেশের বিভিন্ন ধরনের রোগীদের ভরসার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এখানে প্রতিদিনই রোগীর চাপ থাকে। ফলে বেডের পাশাপাশি রোগীর জায়গা হচ্ছে বারান্দা, মেঝে ও হাসপাতালের সিঁড়িতে। আর এ সুযোগে ডা. শাহরিয়ারের মতো কিছু চিকিৎসক, কর্মচারী ও বহিরাগতদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট নানা অজুহাতে রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। এদিকে ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন জরুরি বিভাগে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসা নেন। রোগীদের জন্য জরুরি বিভাগে ১৫ শয্যার একটি ওয়ানস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার খোলা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় তাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ খবর