শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন নিলেন প্রধানমন্ত্রী

করোনা যখন পারেনি তখন আর কেউ থামাতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাকসিন নিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেন -পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী টিকা নেওয়ার সময় পাশে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানাও ক’দিন আগে করোনার টিকা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী টিকা নিয়েছেন। উনি ভালো আছেন।   

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে বহু প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় গণটিকাদান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে নির্ভয়ে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং গত শনিবার দেশে আরও তিন কোটি ডোজ টিকা আনার নির্দেশনা দেন। করোনাভাইরাসের টিকা নিলেও সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে মাস্ক পরার এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড-এর ৩ কোটি ডোজ টিকা আনার বিষয়ে চুক্তি করে। দেশে এ টিকা সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মা। ইতিমধ্যে দুই দফায় কোভিশিল্ডের ৭০ লাখ টিকা দেশে এসেছে। সঙ্গে এসেছে ভারত সরকারের উপহার দেওয়া আরও ২০ লাখ টিকা।

করোনা যখন পারে নাই তখন আর কেউ থামাতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। আর করোনাভাইরাস যেহেতু পারে নাই সেটা আর কেউ পারবে না। এটাই আমার বিশ্বাস। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। খবর বাসস।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফেলোশিপ এবং অনুদানের চেক বিজ্ঞানী ও গবেষকদের হাতে তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের আরও মনোযোগের সঙ্গে মানবকল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিবর্তন দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, আমাদের জায়গা কম হলেও সেই জায়গার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। কাজেই সেটা মাথায় রেখেই গবেষণায় আরও জোর দিতে হবে। যাতে বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি হলে দেশে এবং বিদেশেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে। আমরা সেদিকেই লক্ষ্য রাখছি। আর প্রতিটি শিল্প কারখানায় গবেষণা ও উন্নয়ন শাখাকে কার্যকরী এবং শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে সারা দেশে একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই সেখানেও গবেষণার একান্তভাবে প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার মাধ্যমেই আমরা ব্যয় কমাতে এবং উৎপাদনের উৎকর্ষতা বাড়াতে পারি এবং বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারি। যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, গবেষণা এবং বিজ্ঞানের প্রসার একটি দেশের উন্নয়নে একান্ত অপরিহার্য। কাজেই আপনারা গবেষণা চালিয়ে যাবেন এবং আপনাদের পথ ধরে আগামী প্রজন্মও বিজ্ঞানের গবেষণা করবেন, সেটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকরা দেশের উন্নয়ন না করে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নেই বেশি ব্যস্ত ছিল। আমরা দেখেছি তারা মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোমাবাজি, সেশন জট, আর অস্ত্রের ঝনঝনানিই পরিলক্ষিত হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটা মানুষের জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্যই করা হয়েছিল। তবে ইতিমধ্যে টিকা দান কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষক এবং কর্মচারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। টিকা দেওয়া পর্ব শেষ হলেই এই মার্চ মাসের শেষের দিকে তাঁর সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেবে বলেও তিনি জানান।

অতীতে শিক্ষার্থীরা দেশে বিজ্ঞান পড়ার ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেললে তাঁর সরকারই প্রথম দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের অগ্রগতি সাধনের একটা উপায়। সরকার প্রধান বলেন, গবেষণা ছাড়া বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া একটা জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। কারণ বিজ্ঞানের যুগে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে। তিনি বলেন, যে কারণে তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠা করে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত টেকসই প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করে এবং সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় আজ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো সরকার পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি এবং শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পেরেছিলাম বলেই করোনা মোকাবিলাতেও যথেষ্ট সহযোগিতা এবং সুযোগ পেয়েছি। তাঁর সরকার শিক্ষাকে বহুমুখী করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতেই অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসারে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, যার যেখানে দক্ষতা থাকবে সে সেভাবেই গড়ে উঠবে এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং দেশ লাভবান হবে। তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেন, আমরা হাইটেক সিটি, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করেছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে আমরা ৪৯০টি উপজেলায় এবং ৯০টি ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্লাব গঠন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ গত বারো বছরে ১১৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, ২১১টি প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য হস্তান্তর করেছে, ৪১টি প্রযুক্তির প্যাটেন্ট অর্জন করেছে এবং সাতটির জন্য প্যাটেন্ট আবেদন করেছে।

 

এ সময় রূপপুরের ন্যায় দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকার দক্ষিণ বঙ্গে জায়গা খুঁজছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাইড্রোজেন শক্তি গবেষণাগার, জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনের কাজ অতি দ্রুতই সম্পন্ন হবে। তাঁর সরকার সব বিভাগীয় শহরে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপনের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে।

সর্বশেষ খবর