শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দুই বন্দরের সমস্যা নিয়ে অসন্তোষ বিদেশিদের

কাস্টমসে পণ্য ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতা - বিমানবন্দরে লাগে আট দিন সমুদ্রবন্দরে ১৬ দিন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের সমুদ্র ও বিমানবন্দরে পণ্য ছাড়ে জটিলতায় উদ্বিগ্ন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দুই বন্দরের সমস্যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির কার্যকর বাস্তবায়ন চাইছেন এখন তারা। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে এ বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন ইউরোপ ও জাপানের বিনিয়োগকারীরা। তারা পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে সমুদ্র ও বিমানবন্দরের সুযোগ-সুবিধা আরও উন্নত করার সুপারিশ করেছেন, যাতে দ্রুত পণ্য ছাড় করা যায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অসন্তোষের অন্যতম কারণ হচ্ছে : কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের দীর্ঘসূত্রতা। সম্প্রতি জাপানি বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছেন, পণ্য আনার ক্ষেত্রে তারা বিমান এবং সমুদ্র উভয় বন্দরেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শিল্পের কাঁচামাল কিংবা স্যাম্পল ছাড়ের জন্য বিমানবন্দরে ৮ দিন এবং সমুদ্রবন্দরে অন্তত ১৬ দিন সময় লাগে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, জাপানি বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের পর পণ্য ছাড়ের বিষয়ে এয়ারপোর্টের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য এনবিআরের সমন্বয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল। পরে এ বিষয়ে একটি সভা করে এনবিআর। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কাস্টমস ছাড়াও যেহেতু বিমানবন্দরে পণ্য ছাড়ে আরও অনেক কাজ আছে, সে কারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব এনবিআরের পরিবর্তে সিভিল এভিয়েশনকে দেওয়া উচিত। শেষে সিভিল এভিয়েশনকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠায় এনবিআর।  

সূত্র জানায়, গত বছর আগস্টে ‘বাংলাদেশ-জাপান যৌথ সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কাস্টম ক্লিয়ারেন্স জটিলতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন জাপানি বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া ইইউ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্রিটেনও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাধা হিসেবে দুই বন্দরের পণ্য ছাড়ের জটিলতাগুলো তুলে ধরেছে। ব্রেক্সিটের পর গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইউকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপে বন্দর পণ্য ছাড়ে জটিলতার বিষয়ে অভিযোগ করে এক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ জানায় যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দল। এর আগেও এই একই ইস্যুতে সরকারের কাছে অভিযোগ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর বিনিয়োগকারী ও পোশাক ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলোর অভিযোগ, পণ্য নমুনার ৪১ শতাংশই ছাড় করাতে শাহজালালে গড়ে সাত দিনের বেশি সময় লাগে। এ সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, কাস্টমসের ক্ষেত্রে পণ্য আটকে রাখার মূল কারণ হচ্ছে মূল্য যাচাই জটিলতা। আমদানিকারক কোন দেশ থেকে কোন পণ্যটি আমদানি করেছেন, সরবরাহকারী কে, পণ্যের আমদানিমূল্য কত ছিল- তার সবকিছুই আমদানিকারকের ইনভয়েসসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে উল্লেখ থাকে। সে অনুযায়ী ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট ঘেঁটে তা যাচাই করা যায় মুহূর্তেই। কোনো আমদানিকারক যদি পণ্যের মূল্য কম দেখান তবে তাও নিশ্চিত করা যায়। তাই পণ্যের আমদানি মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করে তার ওপর শুল্কায়ন করাটাই হচ্ছে যথার্থ। কিন্তু এই মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রচলিত নীতি অনুসরণ করছেন। গ্রুপে রক্ষিত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ডাটাভেল্যু কত ছিল তা দেখে নিজেদের মতো করে শুল্ক নির্ধারণ করছেন। এ ধরনের জটিলতা ও মারপ্যাঁচে পড়ে দেখা যায় অনেক সময় আমদানিকারক তার পণ্যটি যথাসময়ে ছাড়িয়ে নিতে পারছেন না। ফলে কারখানার জন্য যে পণ্যটি আনা হয়েছে তার অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যথা সময়ে পণ্য ছাড় করতে না পারায় বন্দর ইয়ার্ডে লাগছে কনটেইনার জট। ফ্রি টাইমের  বেশি সময় কনটেইনার পড়ে থাকায় আমদানিকারককে গুনতে হচ্ছে পোর্ট  ডেমারেজ চার্জ। এ বিষয়ে কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারক রুলস অ্যান্ড প্রসিডিউরস মেনে যখন পণ্য আমদানি করেন না, তখন এ ধরনের জটিলতা দেখা দেয় এবং পণ্য ছাড়ে বেশি সময় লাগে। এর বাইরে দ্রুততম সময়েই তারা পণ্য ছাড় করছেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর