শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশে চলছে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি

মাহমুদ আজহার

দেশে চলছে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি

মেজর (অব.) হাফিজ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, বাংলাদেশে এখন দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি চলছে। যার যেখানে থাকার কথা নয় সে সেখানে অবৈধভাবে চলে গেছে। তিনি বলেন, এ সরকারও নির্বাচিত নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে ভোটের আগের রাতে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে।

গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মেজর (অব.) হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি তথা দেশের সব গণতান্ত্রিক বিরোধী দলমতের মানুষকে বর্তমান সরকার কোনো স্পেস দিচ্ছে না। বিরোধী দলকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ না দিলে, গণতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ না দেখালে দেশে যা হওয়ার তাই হবে। এতে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে। আশা করছি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তিনি বলেন, সরকার যদি এভাবে দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখে তাহলে শিগগিরই এ দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে। তখন আফগানিস্তানে যেভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয় সে ধরনের পরিস্থিতি এখানেও দেখা যেতে পারে। বিএনপি বা যারা ভোটের রাজনীতি করেন তারা হয়তো দৃশ্যপট থেকে সরে যাবেন। সেখানে জঙ্গিরা এসে অবস্থান গ্রহণ করবে। এ পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনা সরকারই দায়ী থাকবে। আলাপচারিতায় সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, পুলিশ নির্দয়ভাবে ছাত্রদল কিংবা বিএনপি নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা করছে। বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ করছে। সেখানে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। আমরা অপেক্ষায় আছি এবং আশা করছি শুভবুদ্ধির উদয় হবে। শোকজ নোটিস নিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, আমাকে দল থেকে একটি শোকজ লেটার দেওয়া হয়েছিল। কেন দেওয়া হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত আমি বুঝে উঠতে পারিনি। তবে আমিও শোকজের জবাব দিয়েছি। দল আমাকে এখনো কিছুই জানায়নি। তবে মাঝেমধ্যেই এখন দলের কর্মসূচিতে ডাকা হয়। এ ব্যাপারে দল কী করবে তা দলের ব্যাপার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এটা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ শরণার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে জীবন বিপন্ন করে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। সে কারণে একজন মুক্তিযোদ্ধার মূল্যায়ন করতে তারা সক্ষম নন। যারা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা জীবন বিসর্জন করতেই গিয়েছিলেন। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছেন। এ স্বাধীনতার জন্য বহু মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেহেতু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে নিরাপদ জীবনযাপন করেছেন, সে জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই জিয়াউর রহমানের মতো রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিল করার উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। তিনি বলেন, এখন সভা-সমাবেশের অনুমতিও দেওয়া হয় না। আমাদের সংবিধানস্বীকৃত বাকস্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা সবকিছুই এ সরকার হরণ করেছে। তারা প্রতিনিয়ত সংবিধান লঙ্ঘন করেই চলেছে। তারা শুধু লুটপাট ও টাকা পাচারেই সব কর্মকান্ড চালাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের দুঃশাসনের সরকার আর পাওয়া যাবে না। তাদের ন্যূনতম জনসমর্থন নেই। সবকিছুতেই দলীয়করণ হয়েছে। বহির্বিশ্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এদের কেলেঙ্কারি এখন প্রকাশ পাচ্ছে। এদের লজ্জাবোধও নেই। অতীতে এভাবে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারেনি, এ সরকারও টিকতে পারবে না। জনরোষে এ সরকারের পতন কবে হবে আমরা সে দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় আছি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে হাফিজউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল অ্যাক্ট বাতিল করা হবে।

 আমরা ক্ষমতায় গেলে এ ধরনের নিবর্তনমূলক কোনো আইন রাখব না। অতীতে যদি বিএনপি কোনো নিবর্তনমূলক আইন রেখেও থাকে তাহলে আমরা আর কোনো ধরনের নিবর্তনমূলক আইন রাখব না। এ ক্ষেত্রে বিএনপি নিশ্চয়ই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সর্বশেষ খবর