রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - আহসান এইচ মনসুর

করোনায় বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ

মানিক মুনতাসির

করোনায় বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, করোনাকালে বিদেশি বিনিয়োগ ধরার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ তা ধরতে পারেনি। অথচ ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, চায়নাসহ বিশ্বের অনেক দেশ এটাকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। তবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের এখানে করোনায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। আবার আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বেশ দ্রুতই শুরু হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমরা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এগিয়ে রয়েছি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বৃহস্পতিবার দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা ৭৫-৮০ শতাংশে আছি। অন্য খাতগুলোও ৭০-৭৫ শতাংশে রান করছে। তবে পর্যটন খাতটা ব্যতিক্রম। এটা স্বাভাবিত হতে আরও সময় লাগবে। সার্বিকভাবে ৭০-৭৫ ভাগ কাজ করছে অন্য খাতগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জুলাইয়ের মধ্যে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। তার মানে কিন্তু এমনটা নয় যে সবকিছু স্বাভাবিক  হয়ে যাবে। অনেক প্রতিষ্ঠান হয়তো ঝরে যাবে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বড় হবে। অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যদি আমরা দ্রুত সহায়তা দিতে পারতাম, তাহলে ক্ষতিটা আরও কম হতো। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার দৃষ্টিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম কেমন চলছে বলে মনে করেন?

আহসান এইচ মনসুর : আমাদের ইকোনমির রিকোভারি বেশ দ্রুতই শুরু হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমরা রিকোভারিতে এগিয়ে আছি। যদিও রপ্তানি খাতটাই শুধু ৭০ বা ৭৫ শতাংশ রিকোভারি হয়েছে। অন্যগুলোও এগোচ্ছে। এর কারণ হলো, আমাদের এখানে অর্থনীতির ক্ষতিটা যেমন কম হয়েছে, তেমনি জনজীবনের ভোগান্তি এবং ক্ষয়-ক্ষতিটাও তুলনামূলক কম হয়েছে। যার ফলে আমরা দ্রুত রিকোভারি করতে পারছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমান  বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আহসান এইচ মনসুর : বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা যদি তথ্য-উপাত্ত দেখি তাহলে দেখা যাবে আমরা এগোতে পারিনি। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগটা এখন ঋণাত্মক পর্যায়ে আছে। মানুষ নতুন করে কোনো বিনিয়োগে আসছে না। আর সরকারের যে প্রণোদনা প্যাকেজ সেটাও শুধু মূলধনী যন্ত্রপাতি বা চলতি মূলধন হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এটা কিন্তু মেয়াদি ঋণ দেওয়া হয়নি। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আসছে না। সেই জায়গাতে আমাদের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। যেমন অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে তেমন বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রবল ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনাকালে বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা বাংলাদেশ কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?

আহসান এইচ মনসুর : না, আমরা পারিনি। আমরা মোটেই সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। অন্যরা পেরেছে। সবাই পেরেছে এমনটি নয়। তবে অনেকেই পেরেছে। যেমন চীন ও ভারতে রেকর্ড পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে এই করোনাতেও। এই বছরে বরং সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে চীন ও ভারতে। যতই বলুক চীন থেকে বিনিয়োগকারীরা সরে আসছে তারপরও সেখানেই যাচ্ছে। এমনকি এ বছর চীনে তো ১৬০ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছে। যেটা আমরা পারিনি। এখানে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে কোনো সুযোগই আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। অথচ বিশ্বের বহু দেশই তা করতে পেরেছে। আমরা জানি যে, ভারতে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ অনেক হয়েছে। এফডিআইও বেড়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে কেন আসছে না। তার মানে এখানে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা বা দুর্বলতা আছে। আমরা কেন এখনো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছি না। মিয়ানমারের মতো একটা অস্থিতিশীল দেশেও এফডিআই আসছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চায়নাতেও বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে হচ্ছে না। এখানে আমাদের নিজেদের উত্তর খুঁজতে হবে। আমরা কিন্তু উত্তরটা জানিও। কিন্তু আমরা সেটা কাজে লাগাতে পারছি না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেজা, বিডা, বেপজা কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

আহসান এইচ মনসুর : তাদের কথা শুনলে তো মনে হয় তারা যথেষ্ট কাজ করছে। চেষ্টা হয়তো করছে। কিন্তু সেটা বিদেশিদের কাছে কনভেন্সফুল হতে হবে। সেটা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। না হলে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি বা বিনিয়োগ তো চোখে পড়ে না। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মহামারী করোনায়ও আমরা ভালো করছি। যেখানে সারা বিশ্ব থমকে আছে সেখানেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আহসান এইচ মনসুর : এখানে দুটি জিনিস আমাদের বুঝতে হবে। এর একটা হলো আমাদের এখানে যে লকডাউনটা ছিল সেটা ছিল খুবই সীমিত পরিসরে। লকডাউনের মধ্যেও আমরা অনেক কাজ করেছি। অনেক দেশে তো মানুষ ঘর থেকেই বেরোয়নি। কোনো কোনো দেশে এখনো লকডাউন চলছে। যে কারণে আমরা খুব একটা সমস্যায় পড়িনি। আরেকটা ব্যাপার হলো, গ্রামের মানুষ কিন্তু লকডাউন মানেনি। স্বল্প আয়ের মানুষও লকডাউন সেভাবে মানেনি। নিজেদের জীবিকার তাগিদে তারা কাজ করেছে। এগুলোই আমাদের এগিয়ে রেখেছে। এগুলো তো উন্নত দেশে দেখা যায়নি। আমাদের এখানে মানুষ জীবিকার তাগিদে কাজ করেছে। বের হয়েছে। এ জন্য আমাদের ক্ষতিটা মেজর ছিল না। এর সঙ্গে আরেকটা ব্যাপার হলো-গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্তটা ছিল, সেটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর একটা সাহসী সিদ্ধান্ত। সেটাও আমাদের অনেক এগিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনায়ও সরকারি-বেসরকারি খাত কাজ করেছে, যার ফলে উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো বলে আপনি মনে করেন?

আহসান এইচ মনসুর : এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো কৃষি খাত। এই খাতটা মোটেই থমকে যায়নি। আর ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকে পথে বসে গেলেও তারা হাল ছাড়েননি। অন্যদিকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোও ছিল বেশ সময়োপযোগী।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পুনরুদ্ধারে কতটা ভূমিকা রেখেছে বলে আপনি মনে করেন।

আহসান এইচ মনসুর : এখানে একটা কথা বলা দরকার তা হলো- প্রণোদনা প্যাকেজগুলো একেবারে ছোট ছিল না। বেশ বড়ই ছিল। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করেছে ব্যাংকগুলো। সরকারকে তেমন কিছু করতে হয়নি। কিন্তু এখানে আমাদের যে দুর্বলতা ছিল সেটা হলো এসএমই খাতের ঋণটা ঠিকমতো বিতরণ হয়নি। এখানে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাই দায়ী। সব ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও আর্থিক অবস্থা সমান নয়। এখানে আবার ব্যাংকগুলোকেও খুব একটা দায়ী করা যায় না। কারণ, ব্যাংকগুলো তো এসবে অভ্যস্ত নয়। হঠাৎ করেই এত বড় একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন আসলেই কঠিন ছিল। এখানে ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতির বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ, তারা তো প্রস্তুত ছিল না। এটা যদি সময়মতো বাস্তবায়ন করতে পারতাম তাহলে আরও কার্যকর হতো।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে জাদুকরী বিষয় কী বলে আপনি মনে করেন, যার কারণে কোনো বাধাই আমাদের থামাতে পারে না।

আহসান এইচ মনসুর : এখানে বড় ব্যাপার হলো একই মতাদর্শের সরকারের ধারাবাহিকতা। এটা সব দেশের জন্যই ভালো। আমাদের এখানে আরও বেশি কার্যকর হয়েছে। কেননা এখানে সরকার পরিবর্তন হলেই পলিসি, আইন-কানুন অনেক কিছু বদলে যায়। অনেক রকম কাজও থেমে যায়। বিভিন্ন সময় দেখা যায় প্রকল্প থেমে যায়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, তাহলে উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত হয়। সরকার যেহেতু অনেক দিন ধরেই ক্ষমতায় আছে এবং এককভাবে দেশ চালাচ্ছে তাই সবকিছুই মোটামুটি স্থিতিশীলভাবে চলছে। তবে এখানে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এখানে কিন্তু আমরা এগোতে পারি না। সরকারের ভিতরে এখনো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। সেগুলো ওভারকাম করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি জানেন করোনায় সরকারের আয় কমে গেছে। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন।

আহসান এইচ মনসুর : এখানে আমরা সরকারকে অনেক আগে (৫/৭ বছর) থেকে বলে আসছি যে, রাজস্ব খাতের জন্য নতুন একটা পরিকল্পনা করা দরকার। এখানে আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এখানে করোনার চেয়ে বড় দায়ী হলো রাজস্ব দুর্বলতা। আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থা বহুদিনের পুরনো। সনাতনী ব্যবস্থা। ভঙ্গুর। অনেকটাই অকার্যকর। এখনো ম্যানুয়াল সিস্টেমে চলে। অর্থাৎ আদান-প্রদান করলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে। অন্যথায় ভোগান্তি। কাজ হয় না। এসব জায়গায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। ব্রিটিশ আমলের সিস্টেমগুলো বদলে ফেলতে হবে। নতুন করে কিছু আইন-কানুন করা দরকার। কর ব্যবস্থাপনাকে বদলে ফেলা দরকার। ভ্যাট আইন ২০১২-তে যে কাঠামোগত ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো খুবই খারাপ। এগুলো খুবই বাজে করা হয়েছে। আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও খুবই কম। এটা ২০১০ সালে ছিল ১১ শতাংশ। এটা এখন কমে গেছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিবার এটা ৪ শতাংশ করে বাড়ার কথা। সেখানে এটা কমে গেছে। কোনো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেই এটা বাড়েনি। আবার করোনার কারণে এটা এখন সাড়ে ৭ শতাংশে নেমেছে। এখানে করোনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। করোনা এ বছর এসেছে। কিন্তু এটা আগে থেকেই কমতির দিকে। অথচ ভারতেও এটা ১৮-২০ শতাংশ। আফ্রিকার দেশগুলোতেও ২২ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোতে ৩০-৪৫ শতাংশ। এটা আমাদের এখানে অন্তত ১৫ শতাংশ হওয়া দরকার। সেখানে আমরা সেটা ৮ শতাংশে রয়েছি। এ বছর তো আরও কমে সাড়ে ৭-এ নামবে। এভাবে এটাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আগামী দিনে পথ চলা সম্ভব নয়। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াতে হলে কঠোরভাবে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বাস্তবায়ন করতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় দেশ ও জাতির স্বার্থে অজনপ্রিয় হলেও সে রকম সিদ্ধান্তই নিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অতিমূল্যায়ন, অনিয়ম, দুর্নীতি প্রসঙ্গে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আহসান এইচ মনুসর : এখানে প্রশাসনিক দুর্বলতা, অনিয়মগুলো কিন্তু নানা কারণে হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাজনৈতিক কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে। প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানো, কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনাসহ গুণগত মানের পরিবর্তন করা জরুরি। এসব কিন্তু এখন সরকারের জন্য বড় চালেঞ্জ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বলে আপনি মনে করেন।

আহসান এইচ মনুসর : আমি মনে করি, এখানে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল এবং সময় এখনো আছে। ২০১০ সালেই সময় ঠিক করা হয়েছিল। আমরা সেটা পিছিয়ে নিয়েছিলাম। আমরা তখন বলেছিলাম ২০২১ সালে গ্র্যাজুয়েশন করব। দেখা গেল আমরা এখন প্রস্তুত। তারপরও আমরা আরও কিছুটা সময় চাচ্ছি। এখানে কারণগুলোও আমরা জানি। আমাদের দেশের যে ট্যারিফ ব্যারিয়ার সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এগুলো কমিয়ে আনতে হবে। আমি ব্রিটিশ কাপড় আনতে দেব না। আবার ব্রিটেনে কাপড় পাঠাব। এটা হতে পারে না। আমাদের এসব ভাবতে হবে। আমি খালি সুযোগ চাইব আর অন্যকে কোনো সুযোগ দেব না সেটা তো লজ্জাজনক ব্যাপার। এটাও মাথায় রাখতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

আহসান এইচ মনসুর : এখানে আরও বেশি সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে। আগে শুধু সরকারি ব্যাংকগুলোতে সমস্যা ছিল। বড় বড় অনিয়মগুলো সরকারি ব্যাংকগুলোতে হতো। আর এখন তো বেসরকারি ব্যাংকেও সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে সরকারি ব্যাংকের মতো বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পর্ষদেও নানা রকম সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে। হয়তো অনেকগুলোতে সমস্যা সেভাবে চিহ্নিতও হচ্ছে না। কিন্তু এখানে বড় ব্যাপার হলো-বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝেও অসততা। গভর্নরের পরের পদের যে লোকগুলো তারা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত। এটা খুবই হতাশাজনক। এখানে একটি কমিশন করা খুব জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের খঁজে বের করতে এবং শাস্তি দিতে দুই-তিনজনের নেতৃত্বে হাই লেভেল একটি কমিশন করতে হবে। স্বল্প সময়ে এই কমিশন একটা কাজ করবে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনবে। যা হবে সবার জন্য দৃষ্টান্ত। যেন পরবর্তীতে কেউ আর এমন কাজ করার সাহস করতে না পারে। এখানে তারা যেটা বিলং করেন জেলে বা অন্য খানে পাঠানো সেই শাস্তিই দিতে হবে। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংককে তো অবশ্যই হতে হবে জবাবদিহিতার মডেল। এখানে অনিয়ম দুর্নীতির শিকড় তুলে ফেলতে হবে। নিষ্কলঙ্ক একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটা করতে পারলে আমি মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তি ফিরে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সততার ঊর্ধ্বে না থাকে তাহলে তো অন্য ব্যাংকগুলোকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। গোড়াতেই যদি গলদ থাকে তাহলে তো চলবে না। পৃথিবীর খুব কম দেশেই হয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির এমন নজির আছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সর্বশেষ খবর