শিরোনাম
সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ডেটলাইন শেষেও দলের কমিটিতে নেই ৩৩ শতাংশ নারী, ইসি চুপ

গোলাম রাব্বানী

ডেটলাইন শেষ। তবুও দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন- রাজনৈতিক দলগুলো এ ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি দলে নারী নেতৃত্ব বাড়লেও, অনেক দলে এখনো নারী নেতৃত্ব নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে বেশি পিছিয়ে রয়েছে ইসলামী দলগুলো। এমনকি নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে চুপচাপ বসে আছে। উল্টো নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে দলগুলোকে আরও এক দশক (২০৩০ সাল) সময় দিতে চায় ইসি।

এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে ভেটিং পর্যায়ে রয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে আরও সময় পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। দল নিবন্ধনে এ প্রতিশ্রুতি পূরণে এক যুগ পার হওয়ার পর নতুন করে প্রায় ‘এক দশক সময় দেওয়ার’ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সব প্রক্রিয়া শেষে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হলেই কত সময় পাচ্ছে দলগুলো তা চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ও সংসদে উপস্থাপনের পর আইন সংশোধন হবে।

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। আরপিও ৯০ খ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির সব দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ২০২০ সাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ইসিতে ৩৯টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। প্রতিশ্রুতি পূরণে ইসির বেঁধে দেওয়া সময় গত বছর শেষ হয়েছে, তবুও সিংহভাগ দলই এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তে বলা আছে, প্রত্যেকটা কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতে হবে। ২০২০ সাল পর্যন্ত সেই সময়ে দেওয়া ছিল। এই টার্গেট ফুলফিল করার ক্ষেত্রে দলগুলো কত শতাংশ তথা কতটুকু এগিয়েছে; আমরা ২০১৮ সালে সেই বিষয়ে একবার প্রতিবেদন নিয়েছি। চলতি বছরে আবারও (২০২১ সালে) দলগুলোর কাছে প্রতিবেদন চাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা যখন আরপিওর বাংলা সংস্করণ করছিলাম, তখন আমরা রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনটাও দেখছিলাম। আমরা দেখলাম ২০২০ সালে (নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার) সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আরপিও সংশোধনীতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত (দলগুলোকে) সময় দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এখন আরপিও সংশোধনী ভেটিংয়ে আছে। আরপিও সংশোধন হলে ইংরেজি এবং বাংলা ভার্সনে সংশোধন হবে। আরপিও আসলে তখন দলগুলো সুযোগ পাবে। দলগুলো ব্যর্থ হয়েছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে এটা ঠিক নয়। দলগুলো যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে দেখা গেছে, অনেক দলের নারী নেতৃত্ব বেড়েছে। ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত পূরণে অধিকাংশ দলের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন নারী নেত্রীরা। তারা বলছেন, শর্তটা তো রাজনৈতিক দলগুলোকে পূরণ করতে হবে। আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া তো শেষ হয়নি; সময় বাড়ানো হয়নি এখনো। কাজেই দলগুলো তো অনেক সময় পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে ১০ বছর পরে আবার বলবে সময় দাও। তারা বলছেন, দলগুলোকে অনেক বেশি সময় দেওয়ার দরকার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর শর্ত পূরণের সদিচ্ছা থাকতে হবে।

গেল বছর আইন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মতামত নিয়েছে ইসি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অধিকাংশ দল, সংগঠন ও নানা ব্যক্তির মতামত পেয়েছিল। তা পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং তা ভেটিং পর্যায়ে রয়েছে। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, দল নিবন্ধন-সংক্রান্ত মতামতসহ বেশ কিছু প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এগুলো মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইং খসড়া নিয়ে কাজ করছে। এখনো ভেটিং পর্যায়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর