সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মহামারী রোধে নারীর লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীতে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশু সবাই কমবেশি বিপর্যস্ত। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা যেন আরও একটু বেশি। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রেই নারীকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সংক্রমণ ও জীবিকা হারানোর ঝুঁকি তো আছেই। এর সঙ্গে নারীর প্রতি আগের চেয়ে সব ধরনের সহিংসতাও বেড়েছে।

তার পরও নারীরা জীবন ও জীবিকার তাগিদে করোনা রোধে লড়াই করে যাচ্ছেন। সংসারে সচ্ছলতা আনতে গৃহিণী নারীও হয়ে উঠছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের দিকে দেখভাল করা ছাড়াও আগের চেয়ে নারীকে গৃহস্থালি কাজে দিতে হচ্ছে বাড়তি শ্রম। নারীদের কেউ কেউ মাস্ক তৈরি করে তা বিতরণ করছেন। কেউবা গরিব-দুস্থদের খাদ্য সহায়তা ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসায় নিয়োজিত নারীরাও জীবন ঝুঁকিতে রেখে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই অবস্থায় আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই নারী চিকিৎসক। করোনা সংক্রমণের শুরুতে পরিবার থেকে দূরে থেকে তারা করোনা রোগীদের সেবাযত্ন করে যান। এর মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক নারী চিকিৎসক মৃত্যুবরণও করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্যে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মোট চিকিৎসকের মধ্যে ১২র জন নারী চিকিৎসক। এ ছাড়াও অনেক নারী চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, করোনাকালে পুরুষ চিকিৎসকদের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে নারী চিকিৎসকরাও এগিয়ে আসেন। এ সময় দুর্ভাগ্যবশত অনেক নারীই করোনায় আক্রান্ত হন। তবে নারী হলেও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা আলাদা কোনো সুবিধা পাননি। সামাজিক কারণে একজন নারীর কাছে তার সংসার অনেক কিছু আশা করে। যে নারীরা মা তাদের কাছে সন্তানের বিশেষ কিছু চাহিদা থাকে। সে ক্ষেত্রে সংসার ও সন্তান সামলে দায়িত্ব পালন করা কিছু ক্ষেত্রে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়। করোনা চলাকালে লকডাউনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অনেক নারী এগিয়ে আসেন। এদের কেউ খাবার বানিয়ে অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করেন। আবার কেউ মাস্ক বানিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। এমনি একজন স্বেচ্ছাসেবী হলেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর বরিশাল জেলার সদস্যসচিব এবং সেখানকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী। করোনাকালে জীবিকা হারানো মানুষের জন্য বিনামূল্যের বাজার-সওদা নিয়ে তিনি খুলেছেন মানবতার বাজার। সে সময় বিপন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন তিনি। দরিদ্রদের জন্য অক্সিজেনের জোগান, খাবার জোগান আবার কখনো অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার কাজও করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, করোনার সময় যেহেতু মানুষের স্বাস্থ্যগত দুর্দশা এবং লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয় একই সঙ্গে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দুর্দশার কারণে মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়, সব কিছু মিলিয়ে তখন কাজ করার অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়। সে সময় আমরাও দল থেকে বরিশালসহ সারা দেশে জনগণের জন্য কাজ করি। নারীরা স্বাস্থ্যগতভাবে সব সময়ই অবহেলিত। আর করোনার সময়ও সেই অবহেলার চিত্র আমরা দেখতে পাই। তারা সে সময় অসুস্থ হলেও তা লুকিয়ে রাখছে এবং পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না। নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতাও এ সময় বৃদ্ধি পায়। চাকরি হারানোর ক্ষেত্রেও নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সব মিলিয়ে করোনার সময় নারীদের সংকটও বেশি ছিল। আমরা সেই সংকটগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।

করোনাকালে শুধু বাড়িতে বাড়তি কাজের বোঝা বহন করেই নারী থেমে থাকেনি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচল রাখতে যে নারীরা আগে কখনো কাজ করেনি তারাও এ সময় এগিয়ে আসেন। নিজ ঘরে খাবার বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করেন অনেক নারী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহামারীতে নারী উদ্যোক্তারা অনলাইনে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। এ সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে নারীদের পণ্য বিক্রিও দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে লকডাউনে ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীই অনলাইনে পণ্য ক্রয় করেন। যা ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত নারীদের জন্য ছিল আশীর্বাদের মতো।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যুগ্ম সচিব এবং উই-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার নিসা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহামারীর দুঃসময়ে সংসারের হাল ধরার জন্য নারীরা এগিয়ে এসেছেন। যে নারীরা আগে কখনো চিন্তাও করেননি যে তিনি উদ্যোক্তা হবেন সংসারের চাহিদা মিটাতে তিনিও এবার উদ্যোক্তা হয়েছেন। একজন নারী তিনি যে বিষয়ে দক্ষ তা পুঁজি করেই ব্যবসা শুরু করেন। এর মাধ্যমে একজন নারী উদ্যোক্তা নিজের পাশাপাশি আশপাশে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর