মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
নারীকে অধিকার আদায় করে নিতে হবে

বাঙালি হত্যায় জড়িত জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঙালি হত্যায় জড়িত জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীদের অধিকার দাও, নারীদের অধিকার দাও বলে শুধু চিৎকার করা বা বলা আর বক্তৃতা দেওয়া, এতে কিন্তু অধিকার আসে না। শিক্ষা-দীক্ষা-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। গতকাল দুপুরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, ৭ মার্চ ভাষনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ২৫ মার্চ যারা বেরিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছিল, তার মধ্যে জিয়াউর রহমান একজন। যারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে তাদের অনেককেই জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে।

নারী দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আরও বলেন, মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, জননী ও নারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। জাতীয় সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধী নেতা সব নারী। এভাবে রাজনীতিসহ বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসছে। অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে মেয়েরা আসতে পারত না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাদের সুযোগ দিয়েছেন। আমরা এসে উচ্চ আদালতেও নারীদের নিয়ে এসেছি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ডসহ সব বাহিনীতে নারীদের অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিদেশে কূটনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও নারীরা হচ্ছেন। স্থানীয় সরকারে নারীদের সংরক্ষিত আসন রেখেছি। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, জয়িতা পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন জয়িতা হাছিনা বেগম নীলা। 

পাঁচ নারীকে জয়িতা পুরস্কার প্রদান : আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় পর্যায়ে পাঁচ সংগ্রামী নারীকে জয়িতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা পদক, ১ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- বরিশাল বিভাগ থেকে হাছিনা বেগম নীলা। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হলেন রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার মিফতাহুল জান্নাত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসএস অধ্যয়নরত ও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সফল জননী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার হেলেন্নেছা বেগম। তিনি তাঁর ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের সবাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তাঁর বড় ছেলে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি, মেজো ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিদেশে উচ্চশিক্ষারত আছেন একজন। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলার রবিজান। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।

তারাও হানাদারদের তোষামোদকারী : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেদিন (৭ মার্চ) পাকিস্তানি বাহিনী প্রস্তুতি নিয়ে বসে ছিল। এই ভাষণের ওপর ভিত্তি করে এদের আক্রমণ করে শেষ করে দেবে। জাতির পিতা এ কৌশল বুঝতেন। তিনি ভাষাটা জানতেন মানুষকে কীভাবে বলতে হবে। এটাই তাঁর রণকৌশল। তাঁর কথা বাংলাদেশের মানুষ বুঝেছিল এবং অক্ষরে অক্ষরে নির্দেশনা মেনে কাজ করেছে। আজকে বিএনপির কয়েকজন নেতার বক্তব্য এবং ওই দিনের সেই কথা মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়, তারাও হানাদারদের তোষামোদকারী।

গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরা (বিএনপি) এখনো তাদের পুরনো প্রভুদের (পাকিস্তান) ভুলতে পারেনি। পাকিস্তানের দালালি, তোষামোদ ও চাটুকারিতার কথা ভুলতে পারেনি। তারা তাদের (পাকিস্তান) পালিত সারমেয় দল হিসেবেই এখনো আছে। এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, যে (জিয়াউর রহমান) পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে বাঙালিদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের মূল হোতা, যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যে (জিয়াউর রহমান) রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয়, সেই দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভাষা ও মর্ম বুঝবে না, এটাই তো খুব স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, তাই মুষ্টিমেয় কিছু লোক কী বলল, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা বলা বা চিন্তা করার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি অর্জনে বাঙালিদের অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি লাইন, প্রতিটি অক্ষরই ছিল একেকটি নির্দেশনা। সর্বাত্মক গেরিলা যুদ্ধের জন্য ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা, যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার পাশাপাশি শেষাংশে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম বলার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে গেছেন। আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, হাবিবুর রহমান সিরাজ, সুজিত রায় নন্দী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মেরিনা জাহান, আবু আহমেদ মন্নাফী, শেখ বজলুর রহমান। গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

সর্বশেষ খবর