বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

হাজী সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাজী সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুই যুগ আগের একটি মামলায় আওয়ামী লীগের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদন্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। রায়ে ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ডও বহাল রাখা হয়েছে। এ টাকা পরিশোধ না করলে আরও এক বছর জেল খাটতে হবে তাকে। মামলায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। ফৌজদারি মামলায় এ দন্ডের কারণে হাজী সেলিমের সংসদ সদস্যপদ ঝুঁকিতে পড়ল। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হলে এমপি থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর এমপি হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বাতিল হবে হাজী সেলিমের এমপি পদ। অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন হাজী সেলিমের আইনজীবী। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পুরান ঢাকার এই আওয়ামী লীগ নেতাকে বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিননামা বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এদিকে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালত হাজী সেলিমকে যে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন প্রমাণ করতে না পারায় উচ্চ আদালত সে অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে। অন্যদিকে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরার আপিলটি বাতিল করা হয়েছে। আদালত রায়ে বলেছে, বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ ধারাসংক্রান্ত আপিল গ্রহণ করা হলো। আর এ আইনের ২৭ (১) এ আপিলের অংশ খারিজ করা হলো।

আদালতে হাজী সেলিম ও তার স্ত্রীর আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মনির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি হাজী সেলিম যেহেতু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তাই এটা তার নৈতিক স্খলন। সাংবিধানিকভাবে তিনি এমপি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার এমপি পদ বাদ হয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার। হাই কোর্টের রায় পাওয়ার পর দুদকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।’ হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেছেন, তারা হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি বলেন, সম্পদের উৎসের বিষয়ে বিচারিক আদালতের রায়ে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু উৎস থেকে যে সম্পদ অর্জিত হয়েছিল সে সম্পদের কারণে তার সাজা বহাল রাখা হলো। মূলত এ গ্রাউন্ডেই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। তিনি বলেন, ‘এ মামলাটি ব্যতিক্রম। ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এক দিনে নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের ২২ মে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর ২৭ মে রায় হয়। অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে একটি মামলার বিচারকাজ কীভাবে শেষ হয়! এ বিষয়গুলো উচ্চ আদালত বিবেচনায় নেয়নি। ফলে আমরা আপিল করব।’ সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল রায়ে বিচারিক আদালত ১৩ বছরের কারাদন্ড দেয় তাকে। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম এ রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাই কোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেয়।

সর্বশেষ খবর