বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে সোনা চোরাকারবারিদের টোপ ফ্রি টিকিট ও হাতখরচ

টার্গেট নিম্ন আয়ের শ্রমিক বেকার প্রবাসী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত নিম্ন আয়ের শ্রমিক ও বেকার প্রবাসীদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে সোনা চোরাচালানের আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রগুলো। ফ্রি বিমানের টিকিট ও হাত খরচের টাকার টোপ দিয়ে সহজ সরল প্রবাসীদের বানাচ্ছে সোনা পাচারের ‘ক্যারিয়ার’।

এ কাজে সহায়তা করছে কাস্টমস ও বিমানবন্দরের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। সোনা চোরাচালানের নতুন এ কৌশলের তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের উপকমিশনার রোকসানা খাতুন বলেন, ‘আমার জানা মতে কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চোরাকারবারিদের নিত্যনতুন কৌশলের কথা আমাদেরও মাথায় রয়েছে। তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করার পরও প্রায় চালান জব্দ করা হচ্ছে।’

গত ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের সিটে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৬০ পিস সোনা জব্দ করে কাস্টমস। পরবর্তীতে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইসি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। তাদের তদন্তে উঠে আসে পেশাদার সোনা ক্যারিয়ারের ভয়াবহ চিত্র। এ বিষয়ে সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পেশাদার সোনা ক্যারিয়ারের তথ্য পেয়েছি। এরই মধ্যে মো. হেলাল উদ্দিন নামে একজন পেশাদার ক্যারিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আবর, কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার রয়েছে। এ ছাড়া চাকরি থাকলেও অনেকের হ্রাস করা হয়েছে বেতন। মূলত এসব নিম্ন আয়ের শ্রমিক এবং বেকার প্রবাসীদের টার্গেট করেই মাঠে নেমেছে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বিভিন্ন সোনা কারবারিরা। সোনা পাচার চক্রের হোতারা প্রবাসীদের রিটার্ন টিকিট এবং নগদ অর্থ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। রাজি হওয়ার পর তাদের হ্যান্ড ব্যাগের মাধ্যমে দেওয়া হয় সোনার চালান। শুরুতে ২০ থেকে ৩০ পিস সোনার চালান দিয়ে পাঠানো হয় ক্যারিয়ারকে। এরপর বাড়তে থাকে সোনার পরিমাণ। কম পরিশ্রমে অধিক টাকা আয় করতে পারায় মধ্যপ্রাচের অনেক শ্রমিক এখন পেশাদার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দর ভিত্তিক একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকে সোনা ক্যারিয়ারকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকদের অনেকে মাসে দু-একবার করে সোনার চালান নিয়ে আসছে। সোনা পাচার চক্রের হোতাদের রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যার মধ্যে রয়েছে দেশের কাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। পাচার চক্রের হোতারা মধ্যপ্রাচের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকপোস্ট পার করে দেওয়ার পর দেশে আসার পর কাস্টমস ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় বের করা হয় সোনার চালান।

সর্বশেষ খবর