শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর

বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় ঢাউস কমিটির প্রয়োজন নেই

দলের স্থায়ী কমিটির বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থদের উপদেষ্টা করা হোক

মাহমুদ আজহার

বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় ঢাউস কমিটির প্রয়োজন নেই

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম বলেছেন, নামের পাল্লা ভারী করতে দলের ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় ‘ঢাউস’ কমিটি করার কোনো প্রয়োজন নেই। ঢাউস কমিটির অর্থ হচ্ছে, একজন অযোগ্য, অথর্ব লোককে খুশি করার জন্য কমিটিতে রাখা। এতে দল উপকৃত হচ্ছে না। দল শক্তিশালী না হলে এ ধরনের কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজ চেম্বারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। শাহজাহান ওমর বলেন, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে নেওয়া উচিত। সেখানে যোগ্য, দক্ষ ও সক্ষম নেতাদের জায়গা করে দেওয়া উচিত। আমরা দলের কাউন্সিলের কথা বলছি। কিন্তু করোনার কারণে কিছু সমস্যা তো

আছেই। তারপরও করোনার মধ্যে যতটুকু সম্ভব ঘরোয়াভাবে কাউন্সিল হতে পারে। এতে নতুন নেতৃত্ব বিকাশ লাভ করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ৮১ সদস্যের। চীনের মতো দেশে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন ৬৮ জন। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি এত বড় করার কোনো যুক্তি নেই। এতে দল শক্তিশালী হয় না, বরং নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রসঙ্গে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান শো’র কিছু নেতা নতুন একটি রাজনৈতিক মেরুকরণের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন কোনো দিনই পূরণ হবে না। এ দেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হালুয়া রুটির পয়সা পেয়ে একটু নড়াচাড়া করতে পারেন, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশের সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে সুশীল সমাজ মুখে কুলুপ লাগিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুশীল সমাজ নানা প্রতিকূল পরিবেশেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু আমার দেশের সুশীল সমাজ এখন অনেকটাই দুর্বল চিত্তের হয়ে পড়েছেন। তারা বোবা, কানা, বধির ও মেরুদন্ডহীন। নির্বাচন কমিশন নিয়ে সম্প্রতি তারা কিছু কথা বলেছেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। তাদের এ মুহূর্তে আরও বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।

ব্যারিস্টার শাজহাজান ওমর বলেন, স্বাভাবিকভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৩ সালে। এর আগেও নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন যখনই হোক না কেন, আমি আশা করব, ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যদি সুষ্ঠু ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে স্যালুট জানাব। কিন্তু ২০০৮, ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো কলঙ্কিত ভোট হলে আমি মনে করি, তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস হবে কলঙ্কিত ইতিহাস।

বিএনপির রাজনীতি কোন পথে জানতে চাইলে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে দুর্বল করে দিয়েছে ওয়ান-ইলেভেন। বড় বড় নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছে। এখনো লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। তাছাড়া বিএনপি এক যুগ ক্ষমতার বাইরে। আওয়ামী লীগ তো ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। দ্বিতীয় নেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। তিনি বিদেশ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যুব ও ছাত্র সমাজকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের নানাভাবে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন সাত আট ঘণ্টা তিনি স্কাইপিতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। বিগত তিন মাস ধরে  দেশে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আমরাও রাজপথে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছি। ছোটখাটো মিছিল, মানববন্ধন করছি। বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করছি। বিএনপি থেকে একটা নেতাও আওয়ামী লীগে নিতে পারেনি। জিয়ার আদর্শ ধরে আমরা এখনো ঐক্যবদ্ধ আছি। একটা পরিবর্তন আসবেই। সেটা রাজনৈতিকভাবেও হতে পারে বা অন্য কোনোভাবে হতে পারে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, আজকে স্বাধীন দেশে আমাদের সঙ্গে পরাধীন দেশের মতো আচরণ করা হচ্ছে। আমরা তো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে নই।

সর্বশেষ খবর