শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

নোয়াখালী নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর বসুরহাটে অভ্যন্তরীণ হানাহানি সংঘাত নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ। গতকালও সেখানে ছিল থমথমে অবস্থা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি ফোর্স পাঠানো হয়েছে কোম্পানীগঞ্জে। 

সূত্রমতে, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং কোন্দল এখন না থামালে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই বছর আগে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি জমা দেওয়া হলেও এখনো অনুমোদন করা হয়নি। এ নিয়েও স্থানীয়ভাবে ক্ষোভ রয়েছে।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে পৌরসভার ভোটের সময় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বিস্ফোরক মন্তব্য করে সবার নজরে আসেন। নির্বাচিত হওয়ার পরও তার বক্তব্য বিবৃতি আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল যা সম্প্রতি মোড় নিয়েছে সংঘাতের দিকে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এর ১৫ দিন আগেই দুই পক্ষের আরেক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এক সাংবাদিক। প্রকাশ্যে দলের প্রভাবশালী দুই পক্ষের এমন সংঘর্ষ, প্রাণহানি, বাগ্যুদ্ধে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলা, অভ্যন্তরীণ বিরোধ এ পর্যন্ত দুটি খুনের ঘটনায় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দলে চেইন অব কমান্ড বলে কিছুই নেই কেন? কারও কারও মতে, সংকট নিরসনে এখন কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সবকিছু জটিল আকার ধারণ করবে। 

আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, নোয়াখালীতে যা ঘটছে তা দুঃখজনক। এটা দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তও চলছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এ সময় দলীয় শৃঙ্খলা কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে অত্যন্ত কঠিন অবস্থানে। দলের শৃঙ্খলা না মানলে যত বড় নেতা বা জনপ্রতিনিধি হোন না কেন, দল ছাড় দেবে না।

আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাট বাজারে  আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি এখনো থমথমে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন শ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল দুুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব থেকে আটক করে সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ। সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে মঙ্গলবার রাতের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার পক্ষ থেকে তার সমর্থক নুর নবী বাদী হয়ে মিজানুর রহমান বাদলসহ ৮০/৯০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকেও সংঘর্ষ, হামলা ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখসহ দেড় শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে বসুরহাট বাজারে এখনো অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। দলীয় কোন্দলের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে জানান অনেকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট এলাকায় র‌্যাব-পুলিশসহ তিন শ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর